অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপের পূর্ব সীমান্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে অস্ট্রিয়ার সমর্থন।
ইইউ পূর্ব বলকান সীমান্তে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার ও অত্যাধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়ায় চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার স্বাগত জানিয়েছেন।অভিবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,ঘুটঘুটে অন্ধকারেও সব দেখার ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষ প্রযুক্তির চশমা, মানুষবিহীন ডুবোজাহাজ, ত্রিমাত্রিক রাডার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণের যন্ত্র এবং ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা—এই সমস্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের নাম শুনে মনে আসতে পারে কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর গল্প-উপন্যাসের কথা। কিন্তু এসব প্রযুক্তি সরঞ্জাম নিয়েই বহিঃসীমান্তে নজরদারি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। লক্ষ্য, অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানো।
২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময়, লাখ দশেকেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ইউরোপে। এখনও থেমে নেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের চাপ। ফলে নড়েচড়ে বসেছেন ইউরোপের নীতিনির্ধারকেরা। আর তারই অংশ হিসেবে, সীমান্ত নজরদারি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে বেছে নেয়া হয়েছে।
ইউরোপের বহিঃসীমান্তে গেলেই দেখা মিলবে সর্বশক্তি নিয়ে নজরদারির কাজ করছেন সীমান্তরক্ষীরা। থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা, নাইট-ভিশন চশমা, মোবাইল ফোন শনাক্ত করার বিশেষ সেন্সর, ট্র্যাকিং ডিভাইস নিয়ে ওয়াচ টাওয়ারে বেশ সতর্ক অবস্থায় আছেন সীমান্তরক্ষীরা। মূলত, তুরস্ক বা বলকান হয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের ঠেকাতেই এতো আয়োজন।
ডিজিটাল অধিকার সংস্থা অ্যাক্সেস নাউ-এর বিশ্লেষক ক্যাটেরিনা রোডেলি বলেন, “প্রযুক্তির ব্যবহার সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের চলাচলকে অনেক অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছে।” তিনি আরো বলেন, “শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির এই ব্যবহার সীমান্ত সহিংসতাকে আরো উসকে দিচ্ছে, আর সীমান্তরক্ষীদের দেয়া হচ্ছে বেপরোয়া ক্ষমতা।”
বর্ডার ভায়োলেন্স মনিটরিং নেটওয়ার্ক ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, “অভিবাসন প্রত্যাশীদের মারধর, জোর করে পোশাক খুলে ফেলা এবং যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটছে সীমান্তে। আর এসবের সঙ্গে যুক্ত রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।” এসব ঘটনা সীমান্তে সহিংসতা আরো বাড়িয়ে তুলছে বলেও সতর্ক করেছিল সংস্থাটি। তাদের মতে, ইউরোপের বহিঃসীমান্ত দিয়ে অন্তত ১৬ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আইন অমান্য করে পুশব্যাক করা হয়েছে।
এদিকে অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার উভয়ে বলকান রাস্ট্র
সমূহে ইইউর উদ্যোগে নতুন করে সীমান্ত সুরক্ষা
ব্যবস্থার জন্য তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছেন।
আগামী মাসগুলিতে, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য
অস্ট্রিয়া থেকেও অতিরিক্ত পুলিশ ইউনিট এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম উপলব্ধ করা হবে বলে গত শনিবার অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক প্রেস নোটে জানানো হয়েছে। তবে প্রেরিত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এই অবৈধ অভিবাসন সমস্যার কারনে শেনজেন অঞ্চল সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া এখনও তার ভেটোর উপর জোর দিয়ে আসছে।
এপিএ আরও জানায়, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য অস্ট্রিয়ার পুলিশ অফিসাররা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা এখন পর্যন্ত, সার্বিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং গ্রিসের সীমান্তে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে সহায়তা দিয়ে আসছে। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাঙ্গেরি, সার্বিয়া এবং উত্তর মেসিডোনিয়ায় অস্ট্রিয়ার ১৩০ জন পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মতে, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং গ্রিসের সীমান্তে অভিযানটি শীঘ্রই ফ্রন্টেক্স অপারেশনে রূপান্তরিত হবে। এর পরেও, অস্ট্রিয়া এই মিশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে থাকবে, এতে বলা হয়েছে। “অস্ট্রিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য পশ্চিম বলকান রাজ্যগুলির সাথে সহযোগিতা প্রয়োজন,” কার্নার ব্যাখ্যা করেছেন।
অন্যদিকে, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়ার জন্য অস্ট্রিয়া থেকে এখনও তাদের অভিপ্রেত শেনজেন যোগদানের জন্য কোন সমর্থন নেই। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ সম্প্রতি কথা বলার পর একটি যৌথ সম্প্রচারে চ্যান্সেলর নেহামার এবং কার্নার বলেছেন, “ইইউ-এর বাহ্যিক সীমানা কার্যকরভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত অস্ট্রিয়া সীমান্ত-নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শেনজেন এলাকার সম্প্রসারণের অনুমতি দেবে না।”
ইইউ কমিশনের কাছে নেহামারের অনুরোধ
সুনির্দিষ্ট। নেহামার আবারও ইইউ কমিশনকে “বহিরাগত সীমান্ত রক্ষার জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ বুলগেরিয়াতে স্থানান্তর করার” আহ্বান জানিয়েছেন। উপরন্তু, দ্রুত প্রক্রিয়া এবং অবিলম্বে রিটার্ন সহ পাইলট প্রকল্পগুলি সরাসরি বাহ্যিক সীমান্তে বাস্তবায়িত করতে হবে।
ফেডারেল চ্যান্সেলর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিম বলকান দেশগুলির সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় অগ্রগামী হিসেবে অস্ট্রিয়ার প্রশংসা করেন এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাথে অস্ট্রিয়ার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। গত বছর, ছয়জনকে বসনিয়া থেকে তাদের মূল দেশে নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং এই বছর তিনজনকে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। অস্ট্রিয়া সরাসরি নির্বাসনের সাথে জড়িত নয়, তবে বসনিয়ান পুলিশ অফিসারদের জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে আসছে।
তথ্যসূত্র: এপিএ, ইনফোমাইগ্র্যান্টস