অভিবাসীদের পুশব্যাক বৈধ করবে লিথুয়ানিয়া।
অনিয়মিত উপায়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের বহিষ্কার এবং সীমান্তরক্ষীদের সমর্থনে একটি বেসামরিক বাহিনী গঠনের বিধান রেখে সীমানা সংক্রান্ত আইনের খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে লিথুয়ানিয়া সরকার। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বাল্টিক অঞ্চলের দেশ লিথুয়ানিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় জানিয়েছে, সংসদ সদস্যদের ভোটে চূড়ান্তভাবে পাস হতে যাওয়া বিলটির লক্ষ্য বেলারুশ থেকে সম্ভাব্য অভিবাসন সংকটের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে লিথুনিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।তবে আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে।
ইউরোপের অভিবাসন সংক্রান্ত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস জানিয়েছে বাল্টিক অঞ্চলের দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার সংসদ সদস্যদের ভোটে চূড়ান্তভাবে পাস হতে যাওয়া বিলটির লক্ষ্য বেলারুশ থেকে সম্ভাব্য অভিবাসন সংকটের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে লিথুনিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।.তবে এনজিওগুলো এই উদ্যোগকে সীমান্তে ‘পুশব্যাক’ স্থায়ী করার একটি উপায় হিসাবে দেখছে।
তাদের দাবি, ২০২১ সাল থেকে লিথুয়ানিয়া এই ‘বেআইনি’ কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ বিষয়টি আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন নথিভূক্ত করার সুযোগ না দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করছৈ। বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, লিথুয়ানিয়ার সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রাথমিক ভোটাভুটির দ্বিতীয় ধাপে রাষ্ট্রীয় সীমানা সংক্রান্ত আইনের সংশোধনীতে সম্মতি প্রদান করেছে।
নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে লিথুয়ানিয়ার সীমান্ত বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপক প্রবাহের সম্মুখীন হলে সরকার উক্ত অঞ্চলে প্রবেশাধিকার সীমিত করতে পারবে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের বহিষ্কার করার অনুমোদন পাবে সীমান্ত পুলিশের সদস্যরা।
তবে আইনের সংশোধনীতে সশস্ত্র সংঘাত, নিপীড়ন বা মানবিক সহায়তার প্রয়োজনে পালিয়ে আসা লোকদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ধারা যোগ করা হয়েছে। রেড ক্রসের লিথুয়ানিয়া শাখায় আশ্রয় ও অভিবাসনের দায়িত্বে থাকা ভিক্টর অস্ট্রোভনজ বলেন, “প্রাথমিকভাবে খসড়া প্রস্তাবটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে এবং এতে বেশ কিছু গ্যারান্টিও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বেলারুশের সাথে থাকা সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য ২০২১ সালের ৩ আগস্ট প্রথমবারের মতো একটি ডিক্রি জারি করা হয়েছিল। যেটি এখনও বহাল রয়েছে। সেই সময় স্বল্পমেয়াদী সংকট মোকাবেলা ডিক্রির মতো অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে সীমান্ত জটিল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।”
২০ হাজারেরও বেশি পুশব্যাক:
ভিলনিয়াসে পার্লামেন্টের ডিফেন্ডার অফ রাইটস বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক এরিকা লিওনাইটও এই বিলের সমালোচনা করেছেন। তার মতে, লিথুয়ানিয়া আশ্রয়ের অধিকারের নিশ্চয়তা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে কি না সেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে । তিনি আপত্তি জানিয়ে বলেন, “সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসন পরিষেবা নয়। কোন ব্যক্তি নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছে কি না তা নির্ধারণ করতে তারা সক্ষম নয়। শরণার্থী কনভেনশনে শরণার্থীদের অবস্থার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।”
উদাহরণস্বরূপ, চারজন কিউবার নাগরিকের ঘটনা উল্লেখ করেছেন লিওনাইট, যারা লিথুয়ানিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ২০২২ সালের এপ্রিলে পুশব্যাকের শিকার হয়েছিলেন। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। এটি প্রমাণ করে যে, বর্তমান ব্যবস্থা কার্যকর নয়।
লিথুয়ানিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটির সীমান্তরক্ষীরা ২০২১ সালের ৩ আগস্ট থেকে জারি করা ডিক্রির আওতায় ২০ হাজার ১৫০টি পুশব্যাক করেছে। এসব বহিষ্কারের ঘটনা সরকারের অনুমোদিত জোন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিচালিত হওয়ায় এই পরিসংখ্যানের সত্যতা যাচাই করা এনজিওগুলোর পক্ষে কঠিন।
২০২২ সালের আগস্টে লিথুয়ানিয়া বেলারুশের সাথে থাকা ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার প্রাচীর নির্মাণ শেষ করেছে। আশ্রয়প্রার্থীরা বর্তমানে শুধুমাত্র সীমান্ত চৌকিতে প্রবেশ করতে পারেন, যদি তাদের পরিচয়পত্র থাকে।
অ্যামনেস্টির তীব্র নিন্দা:
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে এনজিওগুলো লিথুয়ানিয়ায় অভিবাসীদের বসবাসের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির নিন্দা করেছে। তাদের দাবি, নতুন আইনের কারণে সহিংসতা এবং অপব্যবহার আরও বাড়তে পারে। পুশব্যাককে সবুজ সংকেত দেয়ার অর্থ হলো নির্যাতনকে বৈধতা দেয়া।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপীয় অফিসের পরিচালক নিলস মুইজনিক্স বলেন, লিথুয়ানিয়ার সীমান্ত আইনের আইনের সংশোধনীতে বর্ডার পুশব্যাকের চলমান অনুশীলনকে বৈধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি ন্যায়বিচারের জন্য একটি অন্ধকার দিন কারণ লিথুয়ানিয়ার সংসদ আইনের অবৈধ এবং অপমানজনক অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
বেআইনি এবং জোরপূর্বক পুশব্যাকের মাধ্যমে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের এমন জায়গায় ফেরত পাঠানো হয় যেখানে তারা নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহারের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। সরকার তাদের অধিকার এবং লিথুয়ানিয়ার নিজস্ব আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে পদদলিত করছে।”
তার মতে, “বেলারুশের ব্যাপক সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন এবং দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে এই আইনটি কার্যকরভাবে অভিবাসীদের নির্যাতনের দিকে ঠেলে দেয়।”
তিনি বলেন, “এই আইনটি পাস করার মাধ্যমে লিথুয়ানিয়া নিজেকে ইইউ আইন এবং ইইউ কোর্ট অফ জাস্টিসের সাথে একটি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে। ইইউ আদালত এর আগে লিথুয়ানিয়াকে পূর্ববর্তী আইনের জন্য নিন্দা করেছে। লিথুয়ানিয়া আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটলে দেশটি নিজেকে অধিকার মেনে চলা দেশ বলে দাবি করতে পারে না।”
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২৬এপ্রিল/জই