প্রায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ বছর আগের গিরগিটির মতো দেখতে একটি উভয়চর প্রাণী শনাক্ত করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত বালুর উপর হাঁটায় অভ্যস্ত প্রায় ছয় ফুট লম্বা এই সরীসৃপটি সেই সময় অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিচরণ করত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে অ্যারিনাইপেটন সুপিনাটাস। সিডনির কাছে মিঠা পানিতে বসবাস করত এই প্রাণীটি। বিপর্যস্ত পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহিষ্ণু এই প্রাণীটি পৃথিবীতে প্রাণীর মহাবিপর্যয়ের পাঁচটি ধাপের মধ্যে কঠিনতম দুটি পার করতে পেরেছিল। প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে ভয়ানক আগ্নেয়গিরিতে যখন পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ ডাইনোসর বিলীন হয়ে গিয়েছিল তখনও এই প্রাণীটি বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। খবর বিবিসি। এর মধ্য দিয়ে ৯০ এর দশক থেকে গবেষকদের ধাঁধার মধ্যে রাখা একটি রহস্যের সমাধানও খুঁজে পাওয়া গেল। ওই সময় নিউ সাউথ ওয়েলসের একজন সাবেক মুরগির খামারির অচেনা প্রাণীর জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে যে রহস্যের সূত্রপাত হয়েছিল। সারা বিশ্বে এই প্রাণীটির ১০টির কম জীবাশ্ম এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানায় বিবিসি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই আবিষ্কারের ফলে হয়ত ‘অস্ট্রেলিয়ায় উভয়চর প্রাণীর বিবর্তনের ইতিহাস পুনরায় লিখতে হবে’।প্রায় তিন দশক আগে উমিনার বাসিন্দা মিহাইল মিহাইলদিসের বাগানের দেয়াল ভেঙে গেলে সেটা ঠিক করতে গিয়ে অসাধারণ ওই জীবাশ্মটি খুঁজে পাওয়া যায়। সিডনি থেকে সড়কপথে উমিনা যেতে সময় লাগে ৯০ মিনিট। মুরগির খামারি মিহাইলদিস দেয়াল ঠিক করতে ১ দশমিক ৬ টন ওজনের বেলেপাথরের একটি স্লাব কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি যখন পাথরটির বাইরের আবরণ তুলছিলেন তখনই একটি অজানা প্রাণীর জীবাশ্ম বেরিয়ে আসে।
তিনি সময় নষ্ট না করে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে তার আবিষ্কার সম্পর্কে জানান এবং ১৯৯৭ সালে জীবাশ্মটি মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। মিউজিয়ামের জলবায়ু-নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে ওই জীবাশ্মটি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। জীবাশ্মবিদ লাখলান হার্ট শেষ পর্যন্ত ওই জীবাশ্ম ডিকোড করেন। শিশু বয়সে যিনি জীবাশ্মটি প্রথমবার দেখেছিলেন।
হার্ট বলেন, “আমি ডাইনোসরের প্রতি মোহগ্রস্ত ছিলাম…এবং ১৯৯৭ সালে ১২ বছরের আমি প্রথম মিউজিয়ামে ওই জীবাশ্মটি দেখি। তার ঠিক ২৫ বছর পর এটি আমার পিএইচডি-র অংশ হয়, যা অবিশ্বাস্য।”
হার্ট এবং তার দল ২৫ কোটি বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার ট্রায়াসিক যুগের জীবন নিয়ে গবেষণা করছিল। হার্ট বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে’ শনাক্ত করার জন্য তাদের ওই জীবাশ্মটিই দেওয়া হয়েছিল।
“এখানে উল্লেখ করার মত বিষয় হল, জীবাশ্মটিতে প্রায় পুরো কঙ্কালটিই ছিল। বলতে গেলে, পুরোপুরি অক্ষত।
“এটির মাথা বাকি শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এটির চামড়া ও শরীরের বাইরের অংশে থাকা ফ্যাটি টিস্যুও জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে..এ সব কিছুই বলছে, এ এক বিরল আবিষ্কার।” হার্ট বলেন, প্রাণীজগতের প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন প্রাণীর বেঁচে থাকার অন্যতম নিরাপদ স্থান হয়ে থাকে।
বিডিনিউজ ইউরোপ/১২আগস্ট/জই/অস্ট্রেলিয়া