• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি মাহবুব,সহ সভাপতি কামাল, সম্পাদক মমতাজ ধনবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় দেখতে হাজির হাজারো মানুষ ধনবাড়ীতে নানা আয়োজনেরমধ্য দিয়ে কৃষক দলের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ভোলায় র‍্যাবের অভিযানে ১২ মামলার আসামি আটক ১ যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্টের চোখে এবছর বিশ্বে ‘বর্ষসেরা দেশ’ বাংলাদেশ হাসিনা ও জয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান উঠানামায় বিঘ্ন দীর্ঘ এক দশক পরে জনপ্রিয় “আমার দেশ” প্রকাশিত জার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটের ভিড়ের মধ্যে গাড়ির ধাক্কায় নিহত ২ আহত অর্ধশতাধিক ধনবাড়ীতে মাশরুম চাষে আত্মকর্মসংস্থানের হাতছানি

ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিয়ে কর্মী সংকট মেটাতে চায় সার্বিয়া

কবির আহমেদ কূটনৈতিক প্রতিবেদক বিডিনিউজ ইউরোপ
আপডেট : শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪

ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিয়ে কর্মী সংকট মেটাতে চায় সার্বিয়া।সার্বিয়ার অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে চলছে গুরুতর শ্রমিক সংকট। সমস্যা সমাধানে দেশটিতে অবস্থানরত অভিবাসীদের নিয়োগ করতে চাইছে সরকার।সম্প্রতি সার্বিয়ার সরকারের এক পরিসংখ্যান রিপোর্টে বলা হয়েছে,প্রতি বছর দেশটির প্রায় ৩০ হাজার নাগরিক ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ফলে দেশটির গণপরিবহন, নির্মাণ ও হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বেশ কিছু খাতে হন্য হয়ে কর্মী খুঁজছে সার্বিয়ার নিয়োগকর্তারা। পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে পরিচিত এসব খাত।

দেশটির সরকারের অনুমান, প্রতি বছর আনুমানিক
যে, ৩০ হাজার সার্ব নাগরিক দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যান তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ তরুণেরা।
সার্বিয়ান এমপ্লয়ার্স ইউনিয়ন এর মুখপাত্র জেলেনা জেভটোভিচের মতে, “কিছু কিছু কোম্পানি নতুন নিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে এবং তাদের অবস্থান সংহত করার জন্য বেশ কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। যেমন, বিদেশি কর্মীদের জন্য অনুবাদক ও দোভাষী নিয়োগ করা।”

অনেক নিয়োগকর্তারা বিদেশি কর্মচারীদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলেন। কিন্তু সবাই ইংরেজি জানেন না। ইংরেজিসহ অন্য কো ভাবে যখন কাজ চালানো যায় না তখন নির্মাণ খাতের মতো সেক্টরগুলোতে কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিতে দোভাষী নিয়োগ আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, সার্বিয়া যদি বিদেশি শ্রমিকদের দেশটিতে আকর্ষণ করতে চায় সেক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই প্রতিবেশি ক্রোয়েশিয়ার মতো কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্রোয়েশিয়া শ্রম ঘাটতিতে থাকা সেক্টরে বিদেশি কর্মীদের স্বাগত জানাতে অনেকগুলো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। যেমন বিদেশিদের জন্য ক্রোয়েশিয়ান ভাষা শেখার কোর্সের ব্যবস্থাও করেছে কিছু কিছু কোম্পানি।

ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব এর স্থানীয় সরকারের সাংসদ গর্ডান বোসানাকের মতে, “জাগরেব শহরের জন্য এই সিদ্ধান্তটি অপরিহার্য ছিল। কারণ ক্রোয়েশিয়ান ভাষা শেখা হল বিদেশি কর্মীদের ইন্টিগ্রেট বা একীকরণের প্রথম পদক্ষেপ। দেশে সক্রিয় অভিবাসীদের হার ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাড়ছে।” এই সংসদ সদস্য ইউরোনিউজকে বলেন, জাগরেব শহরে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৩ হজার।

তিনি আরো বলেন, “এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের একীকরণ ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষার করা শহরগুলোর উচিৎ নয়।” প্রয়োজন ভাষা ও আবাসন নিয়ে সরকারি উদ্যোগ সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বস সার্বিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে অন্তত ৫০ হাজার অভিবাসী বৈধভাবে সার্বিয়ার কাজের ভিসায় এসেছে। প্রতি বছর এই সংখ্যা বাড়লেও বিদেশি কর্মীদের জন্য সরকার এখনো ইন্টিগ্রেশনন কোর্স ও ভাষা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

ফোর্বস সার্বিয়াকে দেশটির ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস জানিয়েছে, “সার্বিয়াতে এখনও ক্রোয়েশিয়ার মতো কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।”বেলগ্রেডের বেসরকারি পরিবহন কোম্পানি আরিভা শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক বাস চালককে নিয়ে এসেছে। কোম্পানিটি আরো জানায়, “আমরা আমাদের চালকদের জন্য নিজেরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আপাতত সমস্যার সমাধান করেছি। এই কোর্সটি তিন মাস স্থায়ী হয়েছিল। অভিবাসীরা কোর্স চলা অবস্থায় ধীরে ধীরে ভাষা শিখতে শুরু করেছিল।”

সার্বিয়ান ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র জেলেনা জেভটোভিচ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা কর্মীদের ভাষা সমস্যা নিয়ে অবগত। আমাদের একটি ঠিকাদারের কোম্পানিতে তুরস্কের নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাদেরকে ভাষা শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি একজন দোভাষী নিয়োগ করেন। যিনি প্রতিদিন নির্মান সাইটে এসে কর্মীদের সাথে কথা বলেন।”

তবে এইভাবে সমস্যার সমাধান করা সবসময় সম্ভব নয়। বিশেষ করে অনেক কর্মীদের সার্বিয়ান ভাষা শেখার ইচ্ছা নেই। অনেক নিয়োগকর্তাদের মতে, শুধুমাত্র পথে সার্বিয়ায় থাকা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সরকার যদি প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করে সেটি জটিল হবে। কারণ অনেকেই সার্বিয়া থেকে চলে যেতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।

জেলেনা জেভটোভিচ বলেন,একদল কিউবান শ্রমিকের একটি ঘটনা আছে। তারা হোটেল সেক্টরে কাজের ভিসা নিয়ে এসেছিল। তারা প্রথম দুই দিন কাজের জায়গায় হাজির হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় দিনের মাথায় তারা স্পেন এবং যুক্তরজ্যে চলে গিয়েছিল।
জেলেনা আরো বলেন, “বিদেশিদের কর্মসংস্থানের নতুন আইন নিয়ে কাজ করার সময় ভাষা শেখার বিষয়টি নিয়ে মোটেও আলোচনা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এমন উদ্যোগ অল্প সময়ের জন্য সার্বিয়ায় আসা কর্মীদের সাথে কাজ করবে না। এটি তাদের সাথে হতে পারে যারা এখানে স্থায়ী বা দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকবেন।সত্যিই যদি তারা তিন মাস সার্বিয়ায় থাকেন তাহলে তারা আসলে কিছুই শিখতে পারবে না।”

নির্মাণ শ্রমিকদের স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়নের মুখপাত্র সাসা তোরলাকোভিচ বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডে শ্রমিকদের সাংকেতিক ভাষা শেখানো হয়। কারণ একটি নির্মাণ সাইটে ১০ থেকে ১২ দেশের শ্রমিকরাও কাজ করেন। দেশটি শ্রমিকদের থাকার জন্য দশ লাখ হাউজিং ইউনিট তৈরি করছে”।”

তিনি দাবি করেন,সার্বিয়াতে কেউ এখনও আবাসন ও ভাষাজনিত সমস্যা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে না। আবাসনের ভার প্রায়শই শ্রমিকদের নিজেদের উপর অথবা তাদের নিয়োগকর্তাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে সহজ হবে ওয়ার্ক পারমিট
সাসা তোরলাকোভিচ ব্যখ্যা করেন , “বর্তমানে নির্মাণ খাতে কর্মীদের গ্রুপের একজন ইংরেজিতে কথা বলে এবং তার মাধ্যমে সবাই যোগাযোগ করছে।

আমাদের কাছে যখন সাব-কন্ট্রাক্টররা আসেন তখন কর্মীদের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কীভাবে নেপালি, ভারতীয় অথবা ইন্দোনেশিয়ানদের সাথে চুক্তিতে আসা যায়। যাতে অভিবাসী শ্রমিকেরা এখানে নিরাপদ বোধ করে সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। অনেকেই জানে না সমস্যা পড়লে কার কাছে যেতে হবে। আমার ধারণা ছিল তাদের কাছে তাদের মাতৃভাষায় নির্দেশিকা ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেয়া। ভাষা না জানার পরিণতি সর্বোপরি একটি বিশাল নিরাপত্তা সমস্যা।”

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সার্বিয়ায় বিদেশিদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নতুন আইনের আওতায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া সহজ হবে বলে জানিয়েছে ফোর্বস সার্বিয়া। নতুন আইনের আওতায়, রেসিডেন্স পারমিটের অনুমতি এবং ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পদ্ধতিকে একীভূত করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ স্থায়ী হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

সার্বিয়ার বর্তমান আইন অনুসারে, কাজের ভিসায় দেশটিতে আসা একজন বিদেশিকে অবশ্যই হোটেল বা হোস্টেলে চেক ইন করতে হবে এবং পুলিশের কাছে গিয়ে নিবন্ধিত হতে তারপর রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিতে হয়। জেলেনা জেভটোভিচ বলেন,
বর্তমানে আইনে নতুন আসা কর্মীদের দুই মাস লেগে যায় শুধু রেসিডেন্স পারমিট পেতে। ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মীদের সবকিছু ইলেকট্রনিকভাবে সম্পন্ন হবে। আমরা এখনও প্রবিধানের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটি প্রকাশ হলে বিস্তারিতভাবে কাজ করতে পারব।
সার্বিয়া বলকান রুটের একটি প্রধান ট্রানজিট দেশ। দেশটির মধ্যে দিয়ে প্রতি বছর হাজারো আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে অপেক্ষমান থাকে।

bdnewseu/26January/ZI/Serbia


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ