আইসিসি পুরুষদের টি২০ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশের চমক ।বাংলাদেশশক্তিশালী প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে এই টুর্নামেন্টে অপ্রত্যাশিত ফলাফলের ধারা বজায় রেখেছে।শুক্রবার (৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে রাতে অনুষ্ঠিত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রাক্তন বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২ উইকেটে জয়লাভ করে, যেটা টি২০ বিশ্বকাপ ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের টাইগারদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয়।বাংলাদেশ টসে জিতেণ প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট করতে পাঠায়। শ্রীলঙ্কার শুরুটা ভাল হলেও, মুস্তাফিজুর রহমান এবং রিশাদ হোসেনের অসাধারণ বোলিং-এর মুখে তাদের ইনিংস ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানে শেষ হয়।উদ্বোধনী ব্যাটার পাথুম নিসাঙ্কার ৪৭ এর পরে আর কেউ তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মুস্তাফিজ ১৭ রানে ৩টি এবং রিশাদ হোসেন ২২ রানে ৩টি উইকেট পান।জয়ের টার্গেট ২০ ওভারে ১২৫ রান সামনে নিয়ে টাইগাররা ব্যাট করতে মাঠে নামে।
এই জয়ের টার্গেট বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি কঠিন হবার কথা ছিল না। কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুতে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পরে এবং ৬ ওভার শেষ হবার আগেই ২৮ রানে ৩ উইকেট হারায়।
পরে তৌহিদ হৃদয়ের মারমুখী ২০ বলে ৪০ এবং লিটন দাসের ৩৬ টাইগারদের খেলায় ফিরিয়ে আনে। শেষের দিকে দ্রুত তিনটি উইকেট পড়লেও, মাহমুদউল্লাহ মাথা ঠাণ্ডা রেখে এক ওভার বাকি থাকতে দলকে বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:বাংলাদেশ ১৯ ওভার ১২৫/৮ লক্ষ্য; ১২৫ (মাহমুদউল্লাহ ১৬*, তানজিম ১*; সৌম্য ০, তানজিদ ৩, শান্ত ৫, হৃদয় ৪০, লিটন ৩৬, সাকিব ৮, রিশাদ ১, তাসকিন ০)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন।
শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১২৪/৯ (থুশারা ০*, পাথিরানা ০*, মেন্ডিস ৮, কামিন্দু ৪, নিসাঙ্কা ৪৭, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ধনাঞ্জয়া ২১, শানাকা ৩, থিকশানা ০, ম্যাথুস ১৬)।
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি ছিল চলতি বিশ্বকাপের ১৫তম ম্যাচ। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলই অন্তত একটি করে ম্যাচ শেষ করেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের পূর্ণাঙ্গ চিত্রটাও পাওয়া গেল এরই সঙ্গে।
১৫ ম্যাচ শেষে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে আফগানিস্তান। দুই জয়ে সুপার এইটের পথে অনেকটাই এগিয়ে আছে তারা। পরের দুই ম্যাচ থেকে এক ম্যাচে জয় পেলেই প্রায় নিশ্চিত তাদের পরের রাউন্ড। আর মাত্র ১ ম্যাচ হেরেই বিপাকে আছে পাকিস্তান। দুই ম্যাচ হারা শ্রীলঙ্কাও আছে শঙ্কায়। আবার দুই ম্যাচ জেতা যুক্তরাষ্ট্রও ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপে থেকে হয়ে উঠেছে বড় নাম।
‘এ’ গ্রুপ:
ভালো অবস্থানে আছে শিরোপাপ্রত্যাশী ভারত। একটাই ম্যাচ খেলেছে, সেটিতে সহজ জয় পেয়েছে। পরের ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের সঙ্গে। ভারত জিতলে তারা যেমন নিজেদের এগিয়ে নেবে সুপার এইটের দিকে, তেমন পাকিস্তানের বাড়ি ফেরাও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
আর ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ থেকে অন্তত এক ম্যাচে জয় পেলেই সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখবে। পাকিস্তানের জন্য সমীকরণ কঠিন। যেভাবেই হোক ভারত ম্যাচে তাদের জয় চাই। নয়ত সুপার এইটের পথে বাবর আজমদের তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য খেলার দিকে।
‘বি’ গ্রুপ:
রাতে এই গ্রুপের বিগ ম্যাচে মাঠে নামছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। ২ ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপে সবার ওপরে স্কটল্যান্ড। সামনে আছে অস্ট্রেলিয়া এবং ওমান। নাটকীয়তা দেখিয়ে এখান থেকে সুপার এইটে যেতে পারে স্কটিশরা। অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ২ আর ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ১।
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ থেকে আঁচ করা যাবে অনেক কিছুই। তবে ওমানের অবস্থা সঙ্গীন। তারা দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে। আর ২ পয়েন্ট নিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে আছে নামিবিয়া।
‘সি’ গ্রুপ:
দুর্দান্ত ছন্দে আছে আফগানিস্তান। দুই ম্যাচে দুই জয়। সামনে পাপুয়া নিউগিনি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক ম্যাচে জয় পেলেই সুপার এইটের পথে এগিয়ে যাবে আফগানরা। পাপুয়া নিউগিনি দুই ম্যাচে হেরে অনেকটা ছিটকে পড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর নির্ভর করছে নিউজিল্যান্ডের ভাগ্য।
স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য কক্ষপথেই আছে। নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের মত বিগ ম্যাচ বাকি আছে তাদের। আর নবাগত উগান্ডা এক ম্যাচে জয় পেয়েছে। বিশ্বকাপে ভালো কিছু করে দেখাতে মরিয়া দলটি।
‘ডি’ গ্রুপ:
এই গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাই ফেবারিট। তবে নেদারল্যান্ডস নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে সক্ষম। ডাচদের এমন সক্ষমতার জন্যই এই গ্রুপে আছে আলাদা বৈচিত্র্য। এই গ্রুপ থেকে একমাত্র শ্রীলংকাই দুই ম্যাচ খেলেছে। হেরেছে দুই ম্যাচেই। বিপাকে আছে তারা।
বাংলাদেশ পেয়েছে ভালো শুরু। পরের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আর শেষে অপেক্ষা করছে নেদারল্যান্ডস এবং নেপাল। দুই ম্যাচে জয় পেলেই সুপার এইটে দেখা যাবে বাংলাদেশকে। নেদারল্যান্ডস জয় পেয়েছে ১ ম্যাচে। নেপাল হেরেছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে।
bdnewseu/8June/ZI/Sports