২০২৩ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ১,৬০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দিবে সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) এবং ইনফোমাইগ্র্যান্টস নেটওয়ার্ক জানিয়েছেন যে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির সরকার এই প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দেয়। মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সংঘাতের কারণে দেশ ত্যাগে বাধ্য আশ্রয়প্রার্থীরা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে নিপীড়নের কারণে দেশ ত্যাগে বাধ্য নাগরিকদেরও এই বিশেষ বিবেচনায় রাখা হবে।
২০২২ এবং ২০২৩ সালে সুইজারল্যান্ড ১,৬০০ শরণার্থী গ্রহণ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত স্থানান্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুইস সরকার এই ঘোষণা দেয়। তবে শরণার্থীদের মধ্যে মূলত মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে চলমান সংঘাতে ভুক্তভোগীদের আগে আশ্রয় দেয়া হবে। এর পাশাপাশি নিজের দেশে নির্যাতনের হাত থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদেরও পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত সমস্যা বিবেচনায় আশ্রয় দেয়া হবে ।
তবে আশ্রয় ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে সুইস কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত শরণার্থীদের সর্বোচ্চ পাচঁটি ভিন্ন দেশ থেকে গ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১,৬০০ জন শরণার্থী গ্রহণ করার সংখ্যাটি মূলত দেশটির বর্তমান অভিবাসন কোটার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সুইস সরকার জানিয়েছে, করোনা মহামারীর কারণে এই কর্মসূচির আওতায় নতুন করে শরণার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এটি পূরণ করতে সরকার আরো ৩০০ জন অতিরিক্ত শরণার্থী গ্রহণ করবে।
মহামারীর করোনার কারণে অভিবাসীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি গ্রিসে আসা ব্যাপক সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃপক্ষকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২০১৯ সালের সাক্ষ্যরিত মাল্টা চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, রোমানিয়া এবং ফিনল্যান্ড সহ ইউরোপের প্রায় ১০টি দেশে এই অভিবাসীদের স্থানান্তর করা হবে। তবে ইউরোপে অভিবাসীদের বন্টনের এই প্রক্রিয়াকে দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত দেশগুলি অনেক সমালোচনা করে আসছে।
অভিবাসী আগমনের দিক থেকে প্রথম সারিতে আছে ইটালি, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ মে পর্যন্ত এরই মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ লাম্পেদুসা ও সিসিলি দ্বীপে প্রবেশ করেছে। যেটি গত বছরের একই সময়ের তিনগুণ এবং ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশী। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সীমান্তে জরুরী ভিত্তিতে একটি নতুন এবং যুগোপযোগী আশ্রয় ব্যবস্থা প্রণয়নের আহবান জানিয়েছেন ইতালির রাজধানী রোমের স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে ইনফোমাইগ্র্যান্টস নেটওয়ার্ক আরও জানান যে,রোম এবং ইউরোপীয় কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম দেশ হিসেবে ইটালি থেকে শরণার্থী নেয়ার কথা জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড। সম্প্রতি ইটালি পৌঁছেছেন এমন দশজন আশ্রয়প্রার্থীকে স্বাগত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে ডাবলিন।
সংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাটি নগণ্য হলেও বিষয়টিকে প্রতীকী হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে ৷ রোম ও ইউরোপীয় কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত শুধু আয়ারল্যান্ডই ইটালি থেকে শরণার্থী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে আয়ারল্যান্ডের স্থায়ী প্রতিনিধির মুখপাত্র এএফপিকে জানান, ‘‘আমরা সংহতির উদাহরণ হিসাবে দশ অভিবাসীকে গ্রহণ করার মাধ্যমে ইটালিকে সহায়তা করছি৷’’
কয়েক সপ্তাহ আগে টিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ২,২০০ এরও বেশী অভিবাসী কয়েকদিনের ব্যবধানে ইটালির দ্বীপ লাম্পেদুসায় পৌঁছান৷ তার মধ্যে কিছু অভিবাসীর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে ইইউ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ইউরোপীয় কমিশনার উলভা ইউহানসন ও ইটালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুচানা ল্যামোরজেসে৷
ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আয়ারল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশ এখন পর্যন্ত ইটালিতে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। সবার সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, এবং আমরা অভিবাসীদের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরের চেষ্টার অংশ হিসেবে সদস্য দেশগুলিকে সংহতি প্রদর্শনে উৎসাহ দিচ্ছি৷’’
আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তরের জন্য পুনরায় একটি অস্থায়ী প্রক্রিয়া চালু করতে ফ্রান্স এবং জার্মানির সাথে আলোচনার কথা জানিয়েছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি৷ ২০১৯ সালে শরণার্থীর ভার ভাগাভাগি করে নেয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মাল্টায় একমত হয়েছিল৷
ইটালি সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার উপকূল ছেড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ জন মানুষ নৌকায় লাম্পেদুসা ও সিসিলিতে পৌঁছেছেন৷ যেটি ২০২০ সালের একই সময়ের চেয়ে তিনগুন এবং ২০১৯ সালের চেয়ে দশগুণ বেশী ইতালির ৷ পুলিশ ইউনিয়নের সদস্য ডোমেনিকো পিয়ানিস মে মাসের প্রথম দিকে বলেছিলেন, ‘‘লাম্পেদুসায় পরিস্থিতি আক্ষরিক অর্থেই ভয়াবহ৷’’ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ২ হাজার ১০০ এরও বেশী অভিবাসী প্রবেশের পরে তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদেরকে আজকের মতো আর একদিন পার করতে হয় তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রাখা আর সম্ভব হবে না৷’’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা-আইওএম এর তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পার হতে গিয়ে বছরের শুরু থেকে ইতোমধ্যে ৬৬৭ জন অভিবাসী সাগরে ডুবে নিহত হয়েছেন৷ মধ্য ভূমধ্যসাগরের ইটালি ও মাল্টা যাওয়ার রাস্তাটি সবচেয়ে ব্যস্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ যেখানে প্রায় ৫৫৫ জন নিহত হয়েছেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব দেশে অভিবাসীরা পৌঁছাচ্ছেন (ইটালি, গ্রিস, স্পেন ও মাল্টা) তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় কমিশন আশ্রয় ব্যবস্থার একটি সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছিল৷ সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আসাটা বেশ কঠিন৷ কেননা এখন পর্যন্ত অস্থায়ী কিছু ব্যবস্থার অধীনেই বিভিন্ন সময়ে শরণার্থীদের বিভিন্ন দেশ গ্রহণ করেছে, যা পুরোটাই নির্ভর করে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহের উপরে৷
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১জুন/জই