• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি মাহবুব,সহ সভাপতি কামাল, সম্পাদক মমতাজ ধনবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় দেখতে হাজির হাজারো মানুষ ধনবাড়ীতে নানা আয়োজনেরমধ্য দিয়ে কৃষক দলের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ভোলায় র‍্যাবের অভিযানে ১২ মামলার আসামি আটক ১ যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্টের চোখে এবছর বিশ্বে ‘বর্ষসেরা দেশ’ বাংলাদেশ হাসিনা ও জয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান উঠানামায় বিঘ্ন দীর্ঘ এক দশক পরে জনপ্রিয় “আমার দেশ” প্রকাশিত জার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটের ভিড়ের মধ্যে গাড়ির ধাক্কায় নিহত ২ আহত অর্ধশতাধিক ধনবাড়ীতে মাশরুম চাষে আত্মকর্মসংস্থানের হাতছানি

বাউশের ভোর হতে: বৈমানিক মাহফুজুল আলম

বিডিনিউজ ইউরোপ ন্যাশনাল ডেক্স
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

#বাউশের ভোর হতে (পর্ব – ২)

— মাহফুজুল আলম

তাকিয়ে থেকে লাভ কি? আমাকে তো এই পুৃঁচকের ধামাকা (হাগু) পরিষ্কার করে, ছুছু করিয়ে, লোসন-পানি মাখিয়ে, পোষাক পরিয়ে রেডি করতে হবে। তারপর প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন শৈশবের বান্ধবী বিথীকার সাথে কথা বলতে হবে। লজ্জায় আমার মাথা হেট হয় হয় কিন্তু হয় না। কারণ এখন আর ছেলে বয়সী ভাব থাকতে নেই। আমি এখন বাবা, গর্বিত বাবা। তবে লজ্জা তো কিছু পেতেই হয়েছে। প্রথম দিনে কথা বলার ফাঁকে ছোট ছেলের এই বিপত্তি সামলাতে হবে কে জানতো?

আমার বেহাল আবস্থার মজা নিয়ে সেদিনের মত কথা শেষ হলো বিথীকার। বিদায় নিয়ে উপর ওয়ালার কাছে ধন্যবাদ দিয়ে লাইন হতে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু বের হতে পারলাম না কিছুতেই শৈশবের স্মৃতি হতে। শেকড়ের টানে প্রবাস হতে দেশে গিয়ে কিনা করেছি। বাইশ বছর পর ১০৫ জন ক্লাসমেটের মধ্যে ৮৮ জনকে একত্রিত করেছিলাম সেবার দেশে গিয়ে। বন্ধু-বান্ধবী ও তাদের পরিবার সহ একত্রিত হবার কথা আজো ভুলিনি। দেশে যাবার চারমাস আগে হতেই স্কুল থেকে আমাদের ব্যচের নামের লিস্ট নিয়েছিলাম। তারপর এক এক করে বেশিরভাগ সহপাঠীদের এক জায়গায় করেছিলাম। কিন্তু আমাকে কেউ খুঁজে বের করবে তা কল্পনারও বাইরে ছিল। যিনি খুঁজে বের করলেন তিনি আমাকে স্মরণই করতে পারছেন না যে আমি তার ক্লাসমেট ছিলাম কিনা। আমার আইডিয়াটি আমারই উপর কেউ এপ্লাই করবে, ভাবিনি। যাকগে, এটা বড্ড নাড়ির টান। আমি অভিভূত হবো নাকি আবেগে গলা জড়াবো বুঝতে পারছি না।

যাইহোক, আমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ।
— ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবার ছয়মাস পর কেন এক্সেপ্ট হলো?
কথা ঘুরিয়ে রিপ্লে দিলাম,
— আমি কি আমাদের বিথীকার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ফ্রেন্ড হলাম? (এখানে আমার অভিমান হলো, সে তো কখনোই আমাকে মনে করতে পারবে না। অথচ আমি তাকে চিনতাম।)
উত্তর এলো,
— কি মনে হচ্ছে? কোন বিথীকাকে চেনা আছে? আর কৌতুহলটাও এতদিন পর?
— বিশ্বাসের দোলাচলেতে আছি। কারণ চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে বন্ধু রিকোয়েস্ট? তাও আবার শৈশবে যার সাথে কোন দিন কথা হয়েছে কিনা কে জানে।
তাছাড়া, নিজের বড় বোন বিথী আপুর কোলেই তো মানুষ হয়েছি (আমার বড় বোনের নাম বিথী ছিল) । সেই নামের সন্মানের অন্য কাউকে ভালো করে চিনতে হলে এই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের মূল্যায়ণ তো করতেই হবে।

তারপর একটু থেমে লিখলাম,
— আর কৌতূহল? এত লোকের মাঝে আমি যে নেই হয়েই ছিলাম এবং তোমার চোখ আমার অবধি পড়ার মত ফুসরত থাকলে তো। সাধারণের মাঝে সাধারণ ছিলাম। অসাধারণের খোঁজ নিতেও বুকে জোর লাগে। সেটা কি আমার ছিল? (একটু খোঁচা দিলাম বিথীকাকে।)
— ওকে। এবার বলতে হবে – নাজির, চামেলী কি ফ্রেন্ড তোমার? একসাথে পড়ছো?
— ভাগ্যিস, ওদের মনে রেখেছো। তাই তো ওদের রেফারেন্সে আমাকে মিলিয়ে নিতে চাইলে। বলছি, ৯৪ ব্যাচ, সাইন্স। সিরিয়ালে নাজির, শিপ্রা, মনির, আমি। তারপর টিটো। এবার হলো?
— তাহলে আমিই সেই; তোমাদের বিথী। যাকে এতদিন ওয়েট লিস্টে রেখে দিয়েছো। চিনতে এতটা সময় নিলে বন্ধু?
— মনে কিছু করো না। আঘাত করতে নয়, নিজের অপারগতা স্বীকার করতে গিয়ে এখন বলবো, তুমিই তো চিনতে না আমাকে। চল্লিশে এসে পেলে? তাও আবার আমাদের নতুন করে পরিচিত হতে হলো।
আর তুমি সব সবই সেরা ছাত্রী ছিলে। তোমাকে কে না চেনে বন্ধু?
— আমিতো প্রাইমারিতে তোমাদের সাথে পড়েছি। তোমাকে সত্যিই প্রথম চিনতে পারি নাই। তারপর, চামেলীর কাছে শুনে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি।
— মেয়েদের যেই গুণে (রূপে) কদর বাড়ে সেই গুণে তোমাকে খাটো রাখে কে বলো? তুমি সুন্দরী ছিলে ভাই। আমি তো সাধারণ । তাই ঐ কাতার থেকে নিজেকে চিনানো সহজ নয়, বালিকা।

পরে বললাম,
— আচ্ছা মজা করলাম। কিছু মনে করো না। আসলে তোমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এই সেদিন দেখলাম। তারপর একসেপ্ট করলাম। ভাবলাম, বা’রে, কত বছর পর!
— চুপ হয়ে গেছি। তোমার কান্ড দেখছি । বলতে থাকো।
— তবে ঠিক আছে, দেখতে থাকো। আর আমিও আমার অভিমান ঝাড়তে থাকি। রসিক বা বন্ধুত্ব তৈরি করার মত ওতোটা ন্যাচারাল ছিলাম না আমি। বয়সের ঘাটে আর দিনের পাটে বক্রের খাটুনি। তাই তৈরি হয়ে গেছি।
“রসে যেজন তব আজি আদুরে যায়/
অভিমানে বাঁকা মুখ সেথায় হারায়।”

বিথীকা উত্তর দিল,
— আমার হাত থেমে গেছে বন্ধু।
আমি লিখলাম
— কিন্তু আমার লেখা থামেনি।

আবার লিখলাম,
— একটা কথা জানো বন্ধু (বিথীকা), খুব ভালো লাগলো তোমার সাড়া পেয়ে। আমি তো কখনো কোন ক্লাসে ক্লাসমেট মেয়েদের সাথে কথা বলার সাহসই পাইনি। এই ধরো, ক্লাস নাইনে গিয়ে প্রথম কথা শুরু হলো শিপ্রার সাথে। আর তোমরা তো বালিকা বধুর মত দূরের লাজবন্তী। পতপত উড়বে আকাশে কিন্তু কিছু বলা যাবে না । এটা ভেবেই নিজের লাজুকতাকে সায় দিয়েছিলাম। তবে আজ বহুদিন পর হাসি পাচ্ছে। বেশ মজাও পাচ্ছি। আর ভালো কথা, আমি মনে হয় অনেক লিখছি। এক্সসাইটেডও বটে।
আচ্ছা, অনেক কথা হয়ে গেলো। আমি কি ব্যক্তিত্ব হারাচ্ছি? নতুবা আমার কলমে তুমি সরমি হবে। হা হা হা ….!

এ পর্যন্ত বলে থামলাম। বিথীকা এরই মধ্যে আমার ম্যাসেজ দেখে “থ” হয়ে গেছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পেলাম। কারণ এবেলায় এসে কোন বন্ধুর এমন অভিমানী অনর্গল বাক্য হজম করতে হবে তা সম্ভবত কল্পনাও করেনি। বিথিকা লিখলো,
— বন্ধুর সাথে ব্যক্তিত্ব? কি বলছো ? হয় নাকি? তবে তোমার কলম দেখছি ভীষণ চলে।
— তার আগে একটি কথা বলে নেই বন্ধু।
“কলমের টুকটাকে চলন- হয়েছে ধার/
বৃত্তের মাঝে নাই, শুধু এধার-ওধার/
কেন্দ্র হতে ছুটে চলি সমানে সমান/
যদি ভুল হয় কষ্ট হবে খুব,/
বন্ধুত্বে কখনো লাগেনা প্রমাণ। ”

— বাহ্, দারুণ বললে। আমি তোমার মতো এত সুন্দর করে বলতে পারছি না। শুধু একটা কথা বলতে চাই – অনেক বছর পর তোমার সাথে কথা হলো, অনেক ভালো লাগছে। শৈশবে চলে গেছি।
— কিন্তু আমার সাথে তোমার কোন স্মৃতি নেই দেখো। তবুও শৈশবেরই অনুযোগ হয়। শেকল দিয়ে আঁতকে ওঠা শেকড়ী টান। কি ভীষণ অনুভূতি। যেন অনুভূমিক অনুভূতি, তাই না?
— ভাবছি।
— কি ভাবছো? আচ্ছা, এই উত্তরটাও আমি দিচ্ছি। আমি জানি তুমি কি ভাবছো। খুব দুষ্টু আমি, তাই তো? এই বয়সে বাহ্যিক দুষ্টুমিটা কলমে রূপ পায়; অন্তত যারা কখনোই দুষ্টুমিটা স্কুল জীবনে করতে পারেনি। আমার হচ্ছে সেই দশা।
— ঠিক বলছো। আমার অনেক কিছু মনে নেই। নাজিরের কাছেও ধরা খেয়েছি, আবার আজ তোমার কাছেও।
— না, না। এভাবে বলো না। বালিকা ছিলে। কতজনের চোখে রজকিনী ছিলে। আজ এখানে এসে এটুকু তো সইতেই হবে, বন্ধু!
— আমাকে চেতিয়ে মজা নিচ্ছো?
— না, তা হবে কেন? আমি মনে হয় কঠিন করে ফেলেছি পুরো কনভার্সেশনটা। তাহলে কিন্তু একদম সাহিত্যের কটকটে ছাপাখানা হতে বের হয়ে খেশাড়ি ক্ষেতের আইলে এসে দাড়াবো, চলবে?
— চলবে। তবে আমি কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথায় চেয়ে চেয়ে দেখছি তোমার লেখা। এতদিন চুপ থেকে, ভেবে চিন্তে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে, আজ হঠাৎ এমনভাবে গর্জে উঠেছো? আমি তো রীতিমত ভয় পেয়েগেছি, বন্ধু। কি লিখব বুঝতে পারছি না।
— এই সেরেছে!
— আসলে যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমি একটা কথা বলব?
— অবশ্যই।
— আবারও বলছি, মনে কষ্ট পেও না। আসলে আমি তোমাকে ঠিক চিনতে পারি নাই। এখনো ঠিক মনে করতে পারছি না একসাথে পড়েছি কি না!
অনেক চেষ্টা করেছি, কিছুই মনে পড়ছে না। তুমি আমাদের সাথে কোন ক্লাস থেকে পড়ছো?

দুঃখে এবার আমার মরা উচিত। মনে মনে বলতে ইচ্ছে হলো, এই কে কোথায় আছিস, আমাকে একটা প্যারাসিটামলের অর্ধেক ভেঙ্গে এনে দে। আমি খেয়ে মরে যাই। কিন্তু আমার তা আর বলা হলো না। কি উত্তর দেবো ভাবছি। তারপর লিখলাম,
–আচ্ছা, এবার তবে সরে খাড়াই। কি বলো?

উত্তর পাঠিয়ে দিলাম।
সত্যিই এবার ভাবছি। শুধু প্রাইমারি স্কুলের সহপাঠী জেনে বিথীকা কেন প্রবাসে থাকা কোন বন্ধুকে খুঁজে বের করলো? এ যে সঞ্জীবনী শক্তি, কি যে শেকড়ের টান, কি যে শৈশবের হাতছানি; যা বুঝে আমি নিশ্চুপ হয়ে বিথীকার বালিকাবেলার মুখটা খুব করে মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেই স্নিগ্ধ বালিকা-মুখের পুরোপুরি স্পষ্ট কোন ছবি চোখের সামনে এলো না। আবছা ধোঁয়াশা ভোরে হিন্দুপাড়া হতে ভোরের পূঁজো-ঘন্টা বাজে আমার কানে। আমি বিথীকাদের বাড়ির পাশ দিয়ে হেটে যাই। কেউ একজন অমল মাষ্টারের বাড়ি কোনটা জিজ্ঞাসা করলো। ওর বাবার নাম শুনে আমি দেখিয়ে দিলাম ঐ শান বাঁধানো পুকুরওয়ালা বাড়িটা।
সামনে বিষ্টার আস্তানা। আমাদের এলাকার হিন্দুদের সবচেয়ে পুরোনো ধর্মীয় স্থান। বিথীকাদের বাড়ির শান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে ফুটফুটে একটি কিশোরী বালিকাকে বসে থাকতে দেখলাম। হাজার ডেকেও শৈশবের সেই বালিকা আমার ডাক শুনতে পেলো না। সাড়া দিয়ে উঠে এসে বললো না, কিরে ডাকছিস কেন? তাই হয়তো বাস্তবে এসে বিথীকা আমাকে চিনতেই পারেনি।

(চলবে…)

বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৮ নভেম্বর/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ