• শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জীবন রক্ষার্থে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ কে মানবিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল: আইএসপিআর সোস্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দেশের পরিস্থিতি বিনষ্ট করছে কিছু গুষ্ঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যান্সারে আক্রান্ত আগস্ট মাসে ঢাকা সফর আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ঢাকায় তার্কিশ এয়ারলাইন্সে পাখির আঘাতে ইঞ্জিনে আগুন, জরুরী অবতরণ ফিল্ড মার্শাল হলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নতুন পররাষ্ট্রসচিব হচ্ছেন আলম সিয়াম ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আবারও এক ধাপ বাড়লো আমেরিকার ইতিহাসের বৃহত্তম বিক্রয় চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে সৌদির সাথে

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন সৌদি আরবের জেদ্দায়

কবির আহমেদ কূটনীতিক প্রতিবেদক আন্তর্জাতিক ডেক্স থেকে বিডিনিউজ ইউরোপ
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২

মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন সৌদি আরবের জেদ্দায়।সৌদি আরব তার আকাশসীমা “সমস্ত বাহক” এর জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরাইলের তেল আবিব থেকে শুক্রবার তিনি আকাশ পথে জেদ্দায় পৌঁছালেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ভয়েস অফ আমেরিকার (VOA) খবরে বলা হয়েছে,যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ পর্যায়ে এখন সৌদি আরবের জেদ্দায় রয়েছেন। জো বাইডেনের বিমান যোগে ইসরায়েল থেকে সৌদি আরবের মাটিতে অবতরণের মাধ্যমে ইসরাইলে যাওয়া এবং আসার ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার সমাপ্তি ঘটালো সৌদি আরব।

সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুবরাজ সালমান এক বৈঠকে মিলিত হন। উভয়ই দুই দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।এদিকে বিবিসি জানিয়েছে সৌদি আরবে জো বাইডেনের এই সফর নিয়ে তার দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরেই একটি অংশ প্রচণ্ড নাখোশ। তাদের কথা – প্রেসিডেন্ট তার নীতি-নৈতিকতার সাথে আপোষ করলেন।সৌদি আরব আগাগোড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান একটি মিত্র দেশ। অনেক দিন ধরেই আমেরিকার নতুন যে কোন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নিয়ে প্রথম যেসব দেশে যান তার একটি সৌদি আরব। তাহলে এখন কেন এই বিতর্ক?
কারণ, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে-পরে তার কথা, অঙ্গীকারের সাথে জো বাইডেনের এই সফরের কোনো সামঞ্জস্য নেই।

ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকার বহু মানুষের মত জো বাইডেনও ক্ষুব্ধ। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর এতটাই নাখোশ হয়েছিলেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দেন ক্ষমতায় গেলে তিনি এই সৌদি শাসকদের ‘একঘরে’ করে ছাড়বেন।আমেরিকা দশকের পর দশক ধরে প্রধানত জ্বালানি তেলের স্বার্থে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করেন বাইরের যে কোনো দেশের সাথে তার সরকারের সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবাধিকার।

এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজ সালমানের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। সৌদি যুবরাজ তার সাথে কথা বলতে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সৌদি আরবের কাছে নূতন অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেন জো বাইডেন।

সৌদি আরবে সফরের খবর নিশ্চিত হওয়ার পরও অর্থাৎ গত মাসেও বাইডেন বলেন যুবরাজ সালমানের সাথে তার কোনো কথা হবেনা। কিন্তু পরে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় দুজনের মধ্যে জেদ্দায় কথা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুবরাজ সালমান ও সৌদি সরকারের প্রতি
তার পূর্বের নীতির পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন।

অন্যদিকে সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে,ইসরাইল এবং আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধির অংশ হিসাবে রিয়াদের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তটি একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। সৌদি সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইরানের হুমকির বিরুদ্ধে সহমত নীতি।পোষণ করে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরও সমন্বিত এবং স্থিতিশীলতার এই অগ্রগতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেন যে এটি তাঁর প্রশাসনের চাপের ফলে হচ্ছে।

সৌদি আরবে যাত্রার প্রাক্কালে ইসরাইলের তেল আবিবে
এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন,
“যদিও এই বিষয়টি দীর্ঘকাল ধরে আলোচনা করা হয়েছে, এখন, আমার প্রশাসন এবং সৌদি আরবের মধ্যে কয়েক মাসের স্থির কূটনীতির জন্য ধন্যবাদ, এটি অবশেষে একটি বাস্তবতা। আজ, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট যে ইসরাইল থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় উড়ে যাবে”।

বাইডেন বলেন, সৌদি সিদ্ধান্ত “এই অঞ্চলে ইসরাইলের আরও একীকরণের গতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে,”। এটি একটি সম্ভাব্য কূটনৈতিক স্বাভাবিককরণের ইঙ্গিত দেয় যা ট্রাম্প প্রশাসনের আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটাবে। ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি ইসরাইল এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্র প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের পাশাপাশি সুদান এবং মরক্কোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। ফিলিস্তিনিরা বলে যে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র হবার যুক্তি এই চুক্তির দ্বারা পাশ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ ইসরাইলকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আলোচনার জন্য এবং তাদের দখল করা অঞ্চলগুলিতে ফিলিস্তিনিদের সাথে তাদের আচরণের উন্নতি করতে চাপ দিতে আরব দেশগুলি আর কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করছে না।

ইতিপূর্বে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলি নেতৃবৃন্দের
সাথে সাক্ষাত ছাড়াও ফিলিস্তিনের(প্যালেসস্টাইন) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে দেখা করেছেন।ভয়েস অফ আমেরিকার জানিয়েছে শুক্রবার(১৫ জুলাই) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পূর্ব জেরুজালেমের হাসপাতালের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য প্যাকেজসহ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে আলোচনার জন্য অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের সাথে দেখা করেছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবায় সহায়তা করার লক্ষ্যে বহু বছরের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বাইডেন ওই অঞ্চলের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধকারী অন্যান্য পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্যে রয়েছে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ৪জি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের বিকাশ ঘটানো।

এর আগে বৃহস্পতিবার বাইডেন ইসরাইলের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিডের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের বৈঠকের পর দুই নেতা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাদের চুক্তি সম্পর্কে জানান। চুক্তি অনুসারে তারা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হতে দেবেন না। ইসরাইল ২০১৫ সালে ইরান এবং বিশ্বশক্তির একটি গোষ্ঠীর মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তির একটি বড় সমালোচক ছিল।ওই চুক্তির অধীনে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করার কথাহয়েছিল। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পরোক্ষ আলোচনাসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয়কেই চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে,আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ( International Atomic Energy Agency সংক্ষেপেIAEA) বিশ্বে পরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং সামরিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার রোধকল্পে কাজ করে থাকে।

এই সংস্থাটি ১৯৫৭ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত। যদিও জাতিসংঘের অধীনে স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত,তবে বর্তমানে সংস্থাটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ – উভয় পরিষদেই এটি এর কার্যক্রম পেশ করে।

বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৯জুলাই/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ