দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে শূন্য রানে একই বলে পড়ল ৬ উইকেট।কাগিসো রাবাদার অফ স্টাম্পের বাইরে করা ফুল লেংথ ডেলিভারি দূর থেকে খেলার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়লেন প্রাসিধ কৃষ্ণা। চওড়া হাসি ফুটল রাবাদার মুখে। তার হাসির চেয়েও বড় কীর্তি গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। কোনো রান না দিয়েই তারা নিল ভারতের শেষ ৬উইকেট !কেপ টাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৫৩ থেকে একই রানে অল আউট হয়েছে ভারত। প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এবারই প্রথম একই রানে পড়ল কোনো দলের ৬টি উইকেট। স্রেফ ১১ বলের মধ্যে এই ৬ উইকেট হারায় ভারত।নিজের প্রথম ৫ ওভারে ৩০ রান দেওয়া লুঙ্গি এনগিডি শুরু করেন এই ধ্বংসযজ্ঞের। ৩৪তম ওভারে কোনো রান দিয়ে তিনি ফেরান লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজা ও জাসপ্রিত বুমরাহকে।পরের ওভারে দ্বিতীয় বলে ভিরাট কোহলিকে ফেরান রাবাদা। এক বল পর কৃষ্ণার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট মোহাম্মদ সিরাজ। আর পরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান কৃষ্ণা।
ইনিংসের শেষ ১১ বলের বিশ্লেষণ ছিল এমন- আউট, ডট, আউট, ডট, আউট, ডট, ডট, আউট, ডট, আউট ও আউট।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন কোহলি। এছাড়া রানের খাতা খুলতে পারেন কেবল রোহিত শার্মা (৩৯), শুবমান গিল (৩৬) ও রাহুল (৮)। ছয় ব্যাটসম্যান আউট হয় শূন্য রানে। রানের খাতা খুলতে পারেননি অপরাজিত থাকা মুকেশ কুমার। ভারতের ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩৪.৫ ওভারে।
টেস্ট ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ শূন্য রানের রেকর্ড এটিই। এ নিয়ে আটবার দেখা গেল এমন ঘটনা, ভারতের দ্বিতীয়। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার টেস্টে খালি হাতে ফেরেন ভারতের ছয় ব্যাটসম্যান।
এর আগে ২৩.২ ওভারে স্রেফ ৫৫ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দলের প্রথম ইনিংস মিলিয়ে খেলা হয় স্রেফ ৩৪৯ বল। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম বলে দুই ইনিংস শেষ হওয়া ঘটনা আছে স্রেফ একটি। ১৯০২ সালে মেলবোর্নে নিউ ইয়ার টেস্টে স্রেফ ২৮৭ বল স্থায়ী হয় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস।
প্রথম দিনে সব মিলিয়ে পতন হয়েছে ২৩ উইকেটের। দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৬২। এখনও ৩৬ রানে পিছিয়ে আছে তারা।
টেস্টের প্রথম দিনে এই ম্যাচের চেয়ে বেশি উইকেট পড়েছিল কেবল একবারই। ১৯০২ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের টেস্টের শুরুর দিনে ২৫ উইকেটের পতন হয়েছিল।
টেস্টের যে কোনো এক দিনে সর্বোচ্চ উইকেট পতনের তালিকায় কেপ টাউনের এই ম্যাচ আছে যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে। ১৮৮৮ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে পড়েছিল সবচেয়ে বেশি ২৭ উইকেট।
সিরাজের আগুনের বোলিংয়ে প্রোটিয়াদের অল্পেই গুটিয়ে দেওয়ার পর ভারতের ইনিংসে উড়ন্ত শুরু করেন রোহিত। দ্বিতীয় ওভারে এনগিডির বলে চারটি বাউন্ডারি মারেন ভারত অধিনায়ক। তবে অন্যপ্রান্তে সঙ্গ দিতে পারেননি ইয়াশাসবি জয়সওয়াল।
তৃতীয় ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তরুণ বাঁহাতি ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন রোহিত ও গিল। দুজন মিলে যোগ করেন ৫৫ রান। ওভারপ্রতি প্রায় ৫ করে রান তুলতে থাকে ভারত।
রোহিতকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নান্দ্রে বার্গার। ৫০ বলের ইনিংস ৭টি চার মারেন রোহিত। পরে গিলকেও আউট করেন স্রেফ দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি পেসার। ফেরার আগে এই সংস্করণে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন গিল।
দ্রুত ফেরেন শ্রেয়াস আইয়ার। পঞ্চম উইকেট জুটিতে রাহুলকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন কোহলি। দুজনের গোছানো ব্যাটিংয়ে ভালোভাবেই এগোতে থাকে ভারত। এরপর হুট করেই এনগিডি-রাবাদার তোপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস!
দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে শুরুটা ভালো করেন মার্করাম ও এলগার। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৩৭ রান। এরপর ৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
নিজের পরপর দুই ওভারে দুই শিকার ধরেন মুকেশ। তার বলে স্লিপে ধরা পড়েন এলগার। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে তিনি করেন ২৮ বলে ১২ রান। ডি জোর্জি ক্যাচ দেন কিপারের গ্লাভসে।
স্টাবসকে টিকতে দেননি বুমরাহ। দিন শেষে মার্করাম অপরাজিত আছেন ৫১ বলে ৩৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৩.২ ওভারে ৫৫ (মারক্রাম ২, এলগার ৪, জোর্জি ২, স্টাবস ৩, বেডিংহাম ১২, ভেরেইনা ১৫, ইয়ানসেন ০, মহারাজ ৩, রাবাদা ৫, বার্গার ৪, এনগিডি ০*; বুমরাহ ৮-১-২৫-২, সিরাজ ৯-৩-১৫-৬, প্রাসিধ ৪-১-১০-০, মুকেশ ২.২-২-০-২)
ভারত: ১ম ইনিংস: ৩৪.৫ ওভারে ১৫৩ (জয়সওয়াল ০, রোহিত ৩৯, গিল ৩৬, কোহলি ৪৬, শ্রেয়াস ০, রাহুল ৮, জাদেজা ০, বুমরাহ ০, সিরাজ ০, কৃষ্ণা ০, মুকেশ ০*; রাবাদা ১১.৫-২-৩৮-৩, লুঙ্গি ৬-১-৩০-৩, বার্গার ৮-২-৪২-৩, ইয়ানসেন ৯-২-২৯-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২য় ইনিংস: ১৭ ওভারে ৬২/৩ (মারক্রাম ৩৬*, এলগার ১২, জোর্জি ১, স্টাবস ১, বেডিংহাম ৭*; বুমরাহ ৬-০-২৫-১, সিরাজ ৫-২-১১-০, মুকেশ ৬-২-২৫-২)
bdnewseu/4thJanuary/ZI/sports