পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের বাড়াবাড়ির কারণে এলাকাবাসী সাথে সংঘর্ষে নাহিদ নামে ১ যুবক নিহত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আরো ১৪ জন আহত হয়েছেন। এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করেন। অর্ধশত বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাসকারী ৫০ হাজার জনগণের নামে সমিতি পাড়ার জমি তাদের নামে বন্দোবস্তী দেয়ার দাবি জানান।
গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এলাকার শতশত মানুষ এই দাবি জানান। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড় সমিতি পাড়ায় হতাহতের এই জঘন্য ঘটনাটি ঘটে।
গুলিতে নিহত যুবকের নাম শিহাব কবির নাহিদ। তিনি কক্সবাজার পিটিআই’র সাবেক সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাসির উদ্দীন ও কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আমেনা বেগম দম্পতির একমাত্র পুত্র। নিহত নাহিদ পেশায় ব্যবসায়ী ও বিএনপির স্থানীয় নেতা বলে জানা গেছে। আহত গুলিবিদ্ধ শাহাদাত (৩৮) সহ ৮ জনকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক যুবক বিকেলে এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহতদের হাসপাতালে আনতেও বিমানবাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয় বলে দাবি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সমিতি পাড়ার উচ্ছেদ আতংকে ভোগা একদল লোক মঙ্গলবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজলের সাথে মতবিনিময় করতে যান। ফেরার পথে বিমান বাহিনীর ডায়াবেটিস পয়েন্টের চেকপোস্টে সমিতি পাড়ার উচ্ছেদ বিরোধী প্রতিনিধি দলের নেতা শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদকে বিমান বাহিনীর সাদা পোশাকধারী একটি দল আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এ খবর সমিতি পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে জাহেদকে ছাড়াতে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিমুখী হয়। এসময় এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ও বিমানবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বিমান বাহিনীর একটি দল গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে গ্রামবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এসময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। উত্তেজনা প্রশমনে দু’পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে প্রশাসন। বর্তমানে এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্যরা এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। দুপুরে সেনাবাহিনীর সাথে সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর কাজল গিয়ে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিমান বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাবস্থার মতো গুলি করেছে নিরস্ত্র মানুষের ওপর। এই ঘটনা ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর গুলি করে মানুষ মারার কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এদিকে আইএসপিআরের প্রেসনোটের বক্তব্য আরো উত্তোজনা ছড়িয়েছে। আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উচ্ছৃঙ্খল এলাকাবাসী বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর এর প্রেস নোটকে একপেশে এবং উত্তেজনাকর বলে দাবি করে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কুতুবদিয়ার প্রায় ৫০ হাজার নদী ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ অর্ধশত বছর ধরে কক্সবাজার শহরের বর্তমানে এক নম্বর ওয়ার্ড সমিতি পাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন। আর এখানে আছে এশিয়ার বৃহত্তম শুটকি পল্লী। কিন্তু বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বিমান বাহিনীর ঘাটির জন্য ৬৬ একর জমি নিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর জন্য আরো ৩৭ একর জমি নেয়ার জন্য বিমানবাহিনী গ্রামবাসীকে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠে। এতে বসবাসকারী জনগণের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এবং মঙ্গলবার এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় মঙ্গলবার বিনা উস্কানিতে বিমান বাহিনীর সদস্যরা এলাকাবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় এক যুবককে হত্যা করে এবং আরো ১৪ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে আহত করে। এখনো এক যুবককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এলাকায় ২৩টি মহল্লায় ২৩টি মসজিদ রয়েছে। এটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হওয়ায় মসজিদগুলো দোতালা করে এলাকার মানুষ দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি চাইলেও বিমানবাহিনী তা দেয়নি। অথচ পাশেই তারা বহুতল ভবন করে দখল করে নানা কর্মকা- করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গত ৭ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। সমিতি পাড়ার জায়গা তাদেরকে স্থায়ীভাবে বন্দোবস্তু দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজলও ছিলেন।
সেই বিষয়টি ফলোআপ করার জন্য সোমবার এলাকাবাসীর একটি প্রতিনিধি দল এমপি কাজলের সাথে দেখা করতে যায়। এসময় বিমান বাহিনী সদস্য কোনো কারণ ছাড়া এলাকাবাসীর যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নির্যাতিত জাহিদের পিতা ছাবের আহমদ কোম্পানী, মাওলানা ফুরকানুর রশীদ ও এজাবতুল্লাহ কুতুবী।
কক্সবাজারের পরিচ্ছন্ন সাংবাদিক আহমেদ গিয়াস এই ঘটনায় দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বিমান বাহিনীর আজকের আচরণের জন্য ঘৃণা প্রকাশ করেন ।
Economist/24February/ZI/coxbazar