বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বহালের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ।বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বহালের দাবিতে উপাচার্য মোঃ শওকত আলীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে একদল শিক্ষার্থী। আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি, বেলা ১ টায় পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়, “উত্তরের বাতিঘর ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’ যা এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে একদল শিক্ষার্থী ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’ এর নামকরণ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবি জানাচ্ছে, তারা দাবি করছে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটিই নাকি শুধু এই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এই নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে নিতে চায় তারা।”
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, “বেগম রোকেয়া রংপুরে জন্মগ্রহণ করে আমাদের এই অঞ্চলের নামকে মহিমান্বিত করেছেন। ব্যক্তি বেগম রোকেয়া ছিলেন বাঙালি চিন্তাবিদ, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। উপমহাদেশের নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। সেই সাথে তিনি ছিলেন বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং একই সাথে তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সবচেয়ে দৃঢ় কন্ঠস্বর।”
শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, “ইতোমধ্যেই এই পরিবর্তনের বিপক্ষে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আওয়াজ তুলছেন। দেশের সাধারণ মানুষ ও সচেতন নাগরিকরা আন্দাজ করছেন এই নামকরণের পিছে একটা স্বার্থান্বেষী মহল ইন্ধন যোগাচ্ছে, যারা ফ্যাসিবাদের ফসল হিসেবে প্যারালালি বেগম রোকেয়াকে দাঁড় করিয়ে তাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে হেয় করে দেখাতে চাচ্ছে এবং ম্লান করে দিতে চাচ্ছে তার অবদান। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করি, বেগম রোকেয়ার নাম জড়িয়ে থাকায় ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’ বৈশ্বিকভাবেই সমাদৃত।”
শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, “এছাড়াও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হয়ে সমগ্র জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, হয়েছেন সাহসের প্রতীক। যার ফলে এ প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী আরো অধিক পরিচিতি লাভ করেছে এবং শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সম্মানিত হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহু বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী নাম পরিবর্তনের দাবি তুলে তা সকল শিক্ষার্থীদের চাওয়া বলে দাবি করছে। যেখানে, অধিকাংশ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে এটিকে একটি অযৌক্তিক দাবি হিসেবে দেখছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেমন বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হচ্ছে তেমনি বর্তমান নাম মুছে ফেলার এই প্রচেষ্টা দেশে-বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং অপচেষ্টা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে।”
স্মারকলিপিতে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হল-
১. নাম বহাল রাখার বিষয়ে প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বেগম রোকেয়া ফাউন্ডেশন’ তৈরি করতে হবে।
৩. বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র ও তার বাড়ির অংশাবশেষ রক্ষণাবেক্ষণে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ৪ বছরের যেকোনো সেমিস্টারে ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ নামক কোর্স সংযোজন করতে হবে।আমরা আশা করি, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ইংরেজ বিভাগের সাবিনা ইয়াসমিন, মোঃ শফিকুল ইসলাম, রিফাহ তাছনীয়া, নওশীন তাবাসসুম, বাংলা বিভাগের বিপুল চন্দ্র বর্মন ও মোঃ তারেক হোসাইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শাহরিয়ার সোহাগ, এআইএস বিভাগের নূরুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শ্রী ভূপেন চন্দ্র পালসহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থী।
Economist/11March/ZI/culture