ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন প্রধান বিচারপতি ও জামায়াতে ইসলামির শোক প্রকাশ।রবিবার (৪ মে) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’।
বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে,দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
তারা আরও জানান, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন ধরে ধানমন্ডির ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
প্রধান বিচারপতির শোক প্রকাশ:
দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
রবিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় প্রধান বিচারপতি বলেন, তার প্রয়াণে বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং জাতি একজন বিদগ্ধ আইনজ্ঞকে হারালো। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের পক্ষ হতে প্রধান বিচারপতি তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
জামায়াতে ইসলামির শোক প্রকাশ:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
রবিবার(৪ মে) শোক জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
শোকবাণীতে তারা বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য যে,গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় ফেরেন। ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ান।
যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তখন দলটির আমির শফিকুর রহমান এক বার্তায় বলেছিলেন, তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
এরপর তিনি নতুন দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।
২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচারণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশসেরা ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা ও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্বে ছিলেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।
Economist/6May/ZI/sad