• বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যান্সারে আক্রান্ত আগস্ট মাসে ঢাকা সফর আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ঢাকায় তার্কিশ এয়ারলাইন্সে পাখির আঘাতে ইঞ্জিনে আগুন, জরুরী অবতরণ ফিল্ড মার্শাল হলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নতুন পররাষ্ট্রসচিব হচ্ছেন আলম সিয়াম ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আবারও এক ধাপ বাড়লো আমেরিকার ইতিহাসের বৃহত্তম বিক্রয় চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে সৌদির সাথে সাম্প্রতিক পাক-ভারত সংঘাতে সামরিক কৌশলের বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে উস্কানির’ অভিযোগে ইতালিতে দুই বাংলাদেশি আটক

নিরাপদে ফিরে আসল নভোচারী সুনিতা উইলিয়াম ও তার সহকর্মীরা

Online news at the Economist International desk
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সারা পৃথিবীর সবার দৃষ্টি মহাকাশে দীর্ঘ সময় অবস্থান করার পর পৃথিবীতে ফিরে আসছে নভোচারী সুনিতা উইলিয়াম এবং তার সহকর্মীরা। মহাকাশে নভোযানে ৯ মাস আটকে ছিলেন সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে তৈরি আরেক মহাকাশযানে প্রযুক্তিগত সমস্যা এই আটকাবস্থার কারণ।গত বছরের জুনের শুরু থেকে টানা ২৮৬ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে থাকার পর মঙ্গলবার সকালে নভোযানটি থেকে বেরিয়ে এসে ১৭ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করেন সুনিতা ও বুচ।

এই যে এতদিন তারা আটকে ছিলেন একটি নভোযানে, কী করতেন সেটির ভেতরে? সময় কাটত কীভাবে? নভোযানের মতো ছোট্ট জায়গায় কী-ই করার থাকে?এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যখন জানা যায়, মহাকাশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এই নভোচারীরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তখন চোখ কপালে ওঠাটাই স্বাভাবিক।

শুধু কী তাই? তাদের নভোযান অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) গেল বড়দিন উদযাপনও করেন সুনিতারা। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই, এমন জায়গায় করেন শরীরচর্চা।

বিবিসি জানিয়েছে, উপায়ান্তর না দেখে মহাকাশযানে দীর্ঘদিন থাকাকালে গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ সংশ্লিষ্ট কাজ করেন ৫৯ বছরের সুনিতা ও ৬২ বছরের বুচ।

এসব কাজের মধ্যে ছিল রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মহাকাশে নাসার চলমান মিশনে সাহায্য করা; মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করা।এছাড়া গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সহ-নভোচারী নিক হেইগকে নিয়ে মহাকাশযান মেরামত করার লক্ষ্যে সেটি থেকে বের হয়েছিলেন সুনিতা। এরপর সেই মাসের শেষের দিকে আবার একই উদ্দেশে বের হন সুনিতা, এবার সঙ্গে ছিলেন বুচ।

এই নভোচারীদের কাজের মধ্যে ছিল মহাকাশযানের দিকনির্দেশনা নিয়ন্ত্রণকারী সরঞ্জাম মেরামত, এক্স-রে টেলিস্কোপে লাইট ফিল্টার যোগ ও আন্তর্জাতিক ডকিং অ্যাডাপ্টারে প্রতিফলক যন্ত্র প্রতিস্থাপন।

সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের দৃশ্য:

গত সেপ্টেম্বরে সুনিতা আর বুচ মহাকাশ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বলেছিলেন, তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। মহাকাশে ‘অপ্রত্যাশিত কোনও কিছু আশা’ করতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।সুনিতা ও বুচকে বহন করা মহাকাশ যানটি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে।

অর্থাৎ এটি দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে যায়, যা নভোচারীদের প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের দৃশ্য উপহার দেয়।এমন মনোরম দৃশ্য পৃথিবীকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তার সুযোগ করে দেয় বলে জানান সুনিতা।

তিনি বলেন, “সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য পৃথিবী নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবার দরজা খুলে দেয়। আমাদের এই একমাত্র গ্রহের যত্ন নেওয়ার জরুরত আরও যেন বেশি করে বুঝতে শিখি।”পৃথিবী থেকে আড়াইশ মাইল দূরের কক্ষপথে থাকলেও সহকর্মী, বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল নভোচারীদের।

“পৃথিবী থেকে এত মানুষ আমাদের বার্তা পাঠায়, মনে হয় ঘরে বসেই সবার সঙ্গে আছি”, বলেন সুনিতা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট:

সুনিতা ও বুচের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুজন নভোচারী মহাকা শযানে ছিলেন। একজনের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নিক হেইগ। অপরজনের নাম ডন পেটিট।তাদের প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের গত বছরের নির্বাচনের ভোটার ছিলেন।

এ বিষয়ে সেসময় সুনিতা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়া আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।”বুচ জানান, ভোট দেওয়ার জন্য তাদের চারজনকে সহজ উপায় বাতলে দেয় নাসা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাকাশ সংস্থাটি এই চার নভোচারী যাতে মহাকাশ থেকে ভোট দিতে পারে, সেজন্য ই-মেইলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার মহাকাশযানে পাঠায়।নভোচারীরা সেগুলো পূরণ করে স্যাটেলাইটে পাঠায়। সেখান থেকে ব্যালট পেপার নিউ মেক্সিকোর একটি গ্রাউন্ড টার্মিনালে পৌঁছানো হয়।

এরপর ল্যান্ডলাইনের মাধ্যমে ব্যালটগুলো মিশন কন্ট্রোলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সেগুলো নভোচারীদের যার যার এলাকার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়।

শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ব্যায়াম:

মহাকাশে বুচের দিন শুরু হতো ভোর সাড়ে ৪টায়। সুনিতা শুরু করতেন এর দুই ঘণ্টা পর, সাড়ে ৬টায়।সেসময় তারা জানিয়ে ছিলেন, মহাকাশে থাকার কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া রোধ করতে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করেন তারা। এটি তারা বেশ উপভোগ করেন।বুচ বলেছিলেন, “শরীরের জয়েন্টগুলো ব্যথা করছে না। এটা বেশ ভালো দিক।”

বড়দিন উদযাপন:

গত বছর বড়দিনের সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের চার নভোচারী উল্লসিত বার্তা পাঠান। এসব বার্তায় তারা তাদের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।মহাকাশ থেকে পাঠানো ভিডিওতে দেখা ‍যায়, বড়দিনের দিন সান্তা ক্লসের টুপি আর বল্গাহরিণের শিং পরেছিলেন সুনিতারা। কথা বলার জন্য মাইক্রোফোন তারা পরস্পরের দিকে ছুঁড়ে দেন। এসময় ক্যান্ডি কেইনগুলো তাদের মাথার চারপাশে ভাসতে থাকে।

সান্তা ক্লসের টুপির বদৌলতে বড়দিনের দিন নভোচারীদের চুল নেমে যায়। তবে ব্যতিক্রম ছিল সুনিতারটা। তার চুলকে বশে আনতে পারেনি সান্তার টুপি।সুনিতার চুল এতটাই খাড়া ছিল যে, পৃথিবীতে এমনটা করতে গেলে নিঃসন্দেহে তাকে অনেক ধরনের চুলের পণ্য ব্যবহার করতে হতো।

মহাকাশে কেন আটকা পড়েন সুনিতারা:

সুনিতা ও বুচকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য তৈরি মহাকাশ যানের প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে আটকে যান তারা।বোয়িংয়ের সিএসটি-১০০ স্টারলাইনারে করে প্রথম ক্রুযুক্ত পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণ করে ছিলেন নভোচারীরা।নাসার বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামের অধীনে এই মিশনের লক্ষ্য ছিল, স্টেশন থেকে নভোচারীদের আনা-নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত মহাকাশযান তৈরি।

চাঁদে আর্টেমিস মিশন ও মঙ্গলে ভবিষ্যতে মানব মিশনসহ মহাকাশ নিয়ে গভীর অনুসন্ধানের দিকে মনোনিবেশ করতে চায় নাসা।কিন্তু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ২৫ ঘণ্টার ফ্লাইটের সময় হিলিয়াম লিকেজ ও একটি ত্রুটিপূর্ণ থ্রাস্টারের সম্মুখীন হয় স্টারলাইনার, যাতে করে সুনিতাদের ফেরত আসার কথা।

গত ৬ জুন ২৮টি থ্রাস্টারের মধ্যে আরও ৪টিতে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে স্টেশনের সঙ্গে স্টারলাইনারের সংযোগ স্থাপন দেরি হয়ে যায়।

প্রকৌশলীরা ৫টি ত্রুটিযুক্ত থ্রাস্টারের মধ্যে ৪টি মেরামত করতে পারলেও মহাকাশযানটিকে মানব ভ্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে এটিকে খালি ফেরত পাঠায় নাসা। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকা পড়েন সুনিতা, বুচ, নিক আর ডন।সূত্র – রয়টার্স

Economist/20March/ZI/NASA

 


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ