• বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যান্সারে আক্রান্ত আগস্ট মাসে ঢাকা সফর আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ঢাকায় তার্কিশ এয়ারলাইন্সে পাখির আঘাতে ইঞ্জিনে আগুন, জরুরী অবতরণ ফিল্ড মার্শাল হলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির নতুন পররাষ্ট্রসচিব হচ্ছেন আলম সিয়াম ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আবারও এক ধাপ বাড়লো আমেরিকার ইতিহাসের বৃহত্তম বিক্রয় চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে সৌদির সাথে সাম্প্রতিক পাক-ভারত সংঘাতে সামরিক কৌশলের বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে উস্কানির’ অভিযোগে ইতালিতে দুই বাংলাদেশি আটক

কানাডার সংসদে দক্ষিণ এশীয়দের উত্থান

নজরুল মিন্টু সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদক ,গবেষক
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

কানাডার সংসদে দক্ষিণ এশীয়দের উত্থান।কানাডার প্রতিটি নির্বাচনই একেকটি নতুন সমাজচিত্র আঁকে। এই দেশ কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, গণতন্ত্রের পরিপক্বতা ও বহুত্ববাদী আদর্শের জন্যও বিশ্বের নজর কাড়ে। আর সেই আদর্শে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ।দক্ষিণ এশিয়াথেকে  আগত মানুষেরা বহু বছর ধরে এই দেশে শুধু শ্রম নয়, মেধাও দিয়ে ছেন। তারা কারখানায় কাজ করেছেন, ট্রাক চালিয়েছেন, রেস্টু রেন্ট খুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠ দিয়েছেন, আবার হাসপা তালের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে থেকে ছেন। কিন্তু এইবার ২০২৫ সালের নির্বাচনে, তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন—তারা নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু নিজ সম্প্রদা য়ের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, বরং পুরো কানাডার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছেন।

কানাডার নির্বাচনব্যবস্থা কেবল নিয়ম-নীতির কাঠামো নয়—এটি একটি জীবন্ত প্রক্রিয়া, যেখানে অভিবাসী পরিবারগুলোর কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে গড়ে তোলে তাদের নিজস্ব প্রতিধ্বনি। গত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের পদচিহ্ন শুধু শহুরে রাস্তাঘাটে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে পার্লামেন্ট হিলেও। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা কিংবা নেপাল থেকে আসা হাজার হাজার পরিবার প্রথমে এসেছিলেন একটি ভালো জীবনের সন্ধানে। আজ তাঁদের সন্তানেরা ডাক পাচ্ছেন সংসদ কক্ষে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

১৯৭০–৮০’র দশকে যারা এ দেশটিতে আসেন, তারা ছিলেন মূলত শ্রমিক, শিক্ষার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী। আজ সেই অভিবাসী সমাজের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষিত, পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, চিকিৎসক, আইনজীবী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিংবা কৃষিক্ষেত্রের নেতা। যাঁদের গায়ের রং বা উচ্চারণ একসময় বৈষম্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়াতো, আজ তারাই হয়ে উঠছেন নেতৃত্বের প্রতীক। টরন্টো, মিসিসাগা, ব্র্যাম্পটন, সারে, ক্যালগারি কিংবা ভ্যাঙ্কুভারে দক্ষিণ এশীয় নামগুলিই যেন নির্বাচনের চালচিত্রে নতুন ছায়া ফেলছে।

এই অভিবাসীরা কেবল ভোটার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, তারা কানাডার অর্থনীতিতেও বিশাল অবদান রাখছে। কৃষিকাজে পাঞ্জাবি পরিবারগুলোর দক্ষতা, হাসপাতালের ওয়ার্ডে দক্ষিণ এশীয় নার্সদের উপস্থিতি, প্রযুক্তি খাতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব, কিংবা ট্রাকিং ও কন্সট্রাকশনে বাংলাদেশি–শ্রীলঙ্কান শ্রমিকদের নিরবিচার ঘাম—সবকিছু মিলে দক্ষিণ এশীয়দের অবদান এক অনস্বীকার্য সত্য।

তবে সংখ্যার উর্ধ্বে গিয়ে এটি এক প্রজন্মের আত্মনির্মাণের আখ্যান, যারা পরিশ্রমের পাশাপাশি নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করেছে। একটি সমাজ কীভাবে নিজেদের প্রান্ত থেকে কেন্দ্রমুখী করেছে, কিভাবে ছেলেমেয়েরা নিজেদের পরিচয় খুঁজে নিয়েছে স্কুলের বিতর্ক প্রতিযো গিতা থেকে শুরু করে হাউস অব কমন্সের গ্যালারি অবধি, তা এক প্রলম্বিত প্রবাসজীবনের জয়গাথা।

সুখমান সিং গিল কৃষকের খামার থেকে সংসদে:
মাত্র ছাব্বিশ বছরের এক যুবক—সুখমান সিং গিল। অন্টারিওর হাইওয়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কৃষিখামার থেকে যাত্রা শুরু করে এবার তিনি হাউস অব কমন্সে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর জন্ম পাঞ্জাবের বুকানওয়ালা গ্রামে, কিন্তু তিনি বেড়ে উঠেছেন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার আবটসফোর্ডে। তাঁর বাবা-মা কৃষিকাজে যুক্ত ছিলেন—বিশেষ করে ব্লু বেরি, স্ট্রবেরি, মিষ্টি ভুট্টা, এবং ফুলকপি চাষে। গিল নিজেও খামারে কাজ করেছেন টিনএজ বয়স থেকেই। রোদে পুড়ে যাওয়া হাতে শীতের সকালে ট্রাক ভর্তি করে ফল নিয়ে গেছেন মার্কেটে।

সুখমান বলেন, “আমি জানি কীভাবে মাটি ভাঙতে হয়, কীভাবে ঋণ মেটাতে হয়, কীভাবে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করেও অনেক সময় ঘরে এক বস্তা টমেটো ছাড়া কিছু থাকে না।”

এই বাস্তবতা থেকে উঠে আসা সুখমান রাজনীতিতে আসেন স্থানীয় পর্যায়ে। তিনি তাঁর কৃষিজ অভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন—কৃষকের অধিকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স সুবিধা, এবং কৃষিভিত্তিক শিক্ষার পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেন। প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন চেয়ে তিনি দলের অভ্যন্তরেই প্রবল প্রতিযোগিতায় জড়ান মাইক ডি জংয়ের সঙ্গে। ডি জং ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিক। কিন্তু দলীয় সদস্যরা শেষ পর্যন্ত বেছে নেন এই তরুণ খামারীকে। এবারের নির্বাচনে তিনি অ্যাবোটসফোর্ড-সাউথ ল্যাংলি থেকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

আমরজিৎ গিল মনোনয়ন কমিটির চেয়ারম্যান থেকে জনপ্রতিনিধি:
ব্র্যাম্পটনের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত মুখ ভারতীয় বংশদ্ভুত আমরজিৎ গিল। পেশায় তিনি সমাজসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠক। ২০১১ ও ২০১৪ সালে অন্টারিও প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, যদিও তখন জয় পাননি। পরবর্তীতে তিনি ব্র্যাম্পটন ওয়েস্টের মনোনয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হন।

তাঁর নেতৃত্বে দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। এবারের নির্বাচনে তিনি লিবারেল পার্টির এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল খেরাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর অভিবাসী জীবনের শুরুটা হয়েছিল টরন্টোর এক ফ্যাক্টরিতে কাজ দিয়ে। আজ তাঁর নিজের ব্যবসা আছে, তাঁর ছেলেমেয়েরা কলেজে পড়ে। রাজনীতিকে তিনি দেখেন ‘ঋণ শোধের মাধ্যম’ হিসেবে—এই দেশে তিনি যা পেয়েছেন, তা সমাজকে ফিরিয়ে দিতে চান।

দলবিন্দর গিল রিয়েল এস্টেট থেকে রাজনীতির মঞ্চে:
ক্যালগারির রাজনৈতিক মানচিত্রে অনেকেই ভারতীয় বংশদ্ভুত দলবিন্দর গিলকে চেনেন ‘হাউস গিল’ নামে। গত ২১ বছর ধরে তিনি রিয়েল এস্টেট পেশায় যুক্ত। সেই পেশায় তাঁর যথেষ্ট সুনাম, সচ্ছলতাও এসেছে। কিন্তু গিল নিজে সবসময় জানতেন, তিনি শুধু ঘর বিক্রি করতে চান না—তিনি ভবিষ্যৎ গড়তেও চান। তারুণ্যে তিনি ছিলেন এক ছাত্রনেতা, এবং কমিউনিটি সেন্টারে ভলান্টিয়ার হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

এই দীর্ঘ সামাজিক সম্পৃক্ততা ও পেশাদার বিশ্বাসযোগ্যতা তাঁকে রাজনীতির মাঠে আনে। এবারের নির্বাচনে ক্যালগারি ম্যাকনাইট আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

দলবিন্দর বিশ্বাস করেন, “আমাদের সম্প্রদায় শুধু সংখ্যায় নয়, নীতিতে-নীতিতে কানাডার অংশীদার হতে চায়। আমি সেই বিশ্বাস নিয়েই রাজনীতি করছি।”

গুরবক্স সাইনি কমিউনিটি হিরো থেকে সাংসদ:
গুরবক্স সাইনি নামটি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ফ্লিটউড-পোর্ট কেলসে বহুদিন ধরেই পরিচিত। তিনি কখনো কোনোদিন নির্বাচন করেননি, তবে তাঁর কাজ ছিল শত শত মানুষকে একত্র করে শক্তি গড়ে তোলা। তিনি ছিলেন অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা নিয়ে সরব, ছিলেন ফুডব্যাঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, আর ছিলেন স্থানীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

ভারতীয় বংশোদ্ভুত সাইনি দীর্ঘদিন যাবৎ সারে শহরে বসবাস করছেন। তাঁর ছেলে-মেয়ে এখানে স্কুলে পড়ে, স্ত্রী একজন নার্স। এবারের নির্বাচনে তিনি লিবারেল পার্টির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রচারণা ছিল শান্ত কিন্তু স্থায়ী প্রভাবশালী।

রুবি সাহোতা আইনজীবী থেকে সংসদে নেতৃত্ব:
রুবি সাহোতা টরন্টোতে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পিতামাতা পাঞ্জাব, ভারত থেকে কানাডায় অভিবাসিত হন ১৯৭০-এর দশকে। তিনি ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স ও পিস স্টাডিজে স্নাতক এবং ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে আইন পেশায় যুক্ত থাকার পর, তিনি ২০১৫ সালে ব্র্যাম্পটন নর্থ থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেমন: ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনের মন্ত্রী, ফেডারেল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মন্ত্রী, এবং চিফ গভর্নমেন্ট হুইপ।

ইকউইন্ডার গহীর প্লাম্বারের ছেলে থেকে হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট:
ইকউইন্ডার গহীর পাঞ্জাবের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ছয় বছর বয়সে কানাডায় আসেন। তাঁর পিতা ম্যানুয়াল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গহীর ব্র্যামেলিয়া সেকেন্ডারি স্কুল থেকে স্নাতক এবং ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির শুলিচ স্কুল অব বিজনেস থেকে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন এবং নিউ ইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক আইন ফার্মে কাজ করেন। ২০২১ সালে তিনি মিসিসাগা-মাল্টন থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আমানপ্রীত গিল ধর্মীয় সংগঠক থেকে সংসদ সদস্য:
অমানপ্রীত সিং গিল ক্যালগারি স্কাইভিউ থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পূর্বে ইউনাইটেড কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে, তিনি স্থানীয় একটি গুরুদুয়ারা পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন।

অনিতা আনন্দ একাডেমিয়া থেকে মন্ত্রিসভায় নেতৃত্ব:
অনিতা আনন্দ কানাডার ওকভিল ইস্ট থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ক্যান্টভিল, নোভা স্কশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা তামিলনাড়ু এবং মাতা পাঞ্জাব থেকে কানাডায় অভিবাসিত হন। তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন, যেমন: জাতীয় প্রতিরক্ষা, পাবলিক সার্ভিসেস এবং প্রোকিউরমেন্ট। ​

বারদিশ চাগার  যুব নেতৃত্ব থেকে মন্ত্রিসভায়:
বারদিশ চাগার ওয়াটারলু থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুব সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।​

অঞ্জু ধিলন  আইনজীবী থেকে সংসদ সদস্য:
অঞ্জু ধিলন ডরভাল-লাচিন থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন প্রশিক্ষিত আইনজীবী এবং মানবাধিকার বিষয়ক কাজে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।​

সুখ ধালিৱাল অভিজ্ঞ রাজনীতিক:
সুখ ধালিৱাল সারে নিউটন থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এটি তার ষষ্ঠ জয়। তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেছেন এবং কমিউনিটি উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন।​

রণদীপ সরাই আইনজীবী থেকে সংসদ সদস্য:
রণদীপ সরাই সারে সেন্টার থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন আইনজীবী এবং কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।​

পরম বেইন্স মিডিয়া থেকে রাজনীতিতে:
পরম বেইন্স রিচমন্ড ইস্ট-স্টিভস্টন থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মিডিয়া এবং কমিউনিকেশনস ক্ষেত্রে কাজ করেছেন এবং কমিউনিটি উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন।​

জসরাজ হাল্লান ব্যবসায়ী থেকে সংসদ সদস্য:
জসরাজ হাল্লান ক্যালগারি ইস্ট থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করেছেন।​

অর্পণ খান্না যুব নেতা থেকে সংসদ সদস্য:
অর্পণ খান্না অক্সফোর্ড থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি যুব সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।​

টিম আপ্পাল অভিজ্ঞ রাজনীতিক:
টিম আপ্পাল এডমন্টন গেটওয়ে থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন।​

পারম গিল ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে:
পারম গিল মিলটন ইস্ট থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করেছেন।​

জগশরণ সিং মাহাল: কমিউনিটি সংগঠক থেকে সংসদ সদস্য
জগশরণ সিং মাহাল এডমন্টন সাউথইস্ট থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।​

হার্ব গিল ব্যবসায়ী থেকে সংসদ সদস্য:
হার্ব গিল উইন্ডসর ওয়েস্ট থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করেছেন।​

শফকাত আলী মুসলিম কণ্ঠ:
পাকিস্তান বংশোদ্ভূত শফকাত আলী ২০২১ সালেই নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্র্যাম্পটন সেন্টার থেকে। এবার তিনি ব্র্যাম্পটন-চিংকুসি পার্ক নামের নতুন নির্বাচনী এলাকা থেকে আবারও লিবারেল পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। শফকাত নিজে দীর্ঘদিন রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন পিতাও—তাঁর দুই সন্তান স্কুলে পড়ে।

তিনি ইসলামিক সোসাইটির একজন কার্যকর সদস্য, স্থানীয় মসজিদের সঙ্গে যুক্ত, এবং নিয়মিত দাতব্য কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। শফকাতের কাছে রাজনীতি মানে “কেবল আইন প্রণয়ন নয়, বরং কমিউনিটির অভ্যন্তরীন সমস্যার স্থায়ী সমাধান খোঁজা।”

সমীর জুবেরি মানবাধিকার কর্মী থেকে সংসদ সদস্য:
সমীর জুবেরি কুইবেকের পিয়েরেফঁস–ডলার্ড থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পিতামাতা স্কটিশ-ইতালিয়ান এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।

তিনি গণিতে স্নাতক এবং আইনশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী। সংসদে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিটির চেয়ারে ছিলেন এবং উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে এম-৬২ প্রস্তাব পাসে নেতৃত্ব দেন। তাঁর কাজ বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি এবং মানবিক নীতির পক্ষে এক নিরলস সংগ্রাম।

আসলাম রানা প্রকৌশলী থেকে জনপ্রতিনিধি:
পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া আসলাম রানা ২০০৩ সালে কানাডায় আসেন। এইবার তিনি অন্টারিওর হ্যামিল্টন সেন্টার থেকে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং পাঁচ সন্তানের জনক। কর্মসংস্থান, পরিবেশ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার উন্নয়নে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁর মূল লক্ষ্য হলো পরিবার-কেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

ইয়াসির নাকভি: আন্দোলনকারীর সন্তান থেকে ন্যায়বিচারমন্ত্রী
করাচিতে জন্ম নেওয়া ইয়াসির নাকভি ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে পরিবারসহ কানাডায় আসেন। তাঁর বাবা ছিলেন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী।

তিনি ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও অটোয়া ল’ স্কুলে পড়াশোনা করেন। প্রদেশীয় রাজনীতিতে অন্টারিওর অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে Safe Access to Abortion আইন ও ডিজিটাল জাস্টিস অ্যাকশন প্ল্যান চালু করেন। এবার তিনি অটোয়া সেন্টার থেকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ইকরা খালিদ ন্যায়বিচারের কণ্ঠস্বর:
লাহোরে জন্ম নেওয়া ইকরা খালিদ ১৯৯৮ সালে পরিবারসহ কানাডায় আসেন। বর্তমানে তিনি অন্টারিওর মিসিসাগা—এরিন মিলস থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিদ্যা ও পেশাগত লেখালেখি এবং আমেরিকার কুলি ল’ স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি অর্জন করেন। পার্লামেন্টে তিনি মানব পাচার, প্রবীণ নির্যাতন এবং রোহিঙ্গা গণহত্যা স্বীকৃতির মতো বিষয়ের পক্ষে সোচ্চার। ২০১৭ সালে তিনি ‘চাটেলেইনের ওম্যান অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন।

সালমা জাহিদ প্রত্যাবর্তনের প্রতীক:
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সালমা জাহিদ ২০১৫ সাল থেকে অন্টারিওর স্কারবোরো সেন্টার থেকে লিবারেল এমপি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। সালমা শিক্ষা ও ব্যবসা শাস্ত্রে স্নাতক।

স্টেজ ৪ নন-হজকিন লিম্ফোমা থেকে সুস্থ হয়ে ২০১৮ সালে তিনি হিজাব পরিহিত প্রথম এমপি হন। নারী অধিকার, মুসলিম কমিউনিটির নিরাপত্তা ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়ে তিনি সংসদে সক্রিয়।

ভবিষ্যতের কণ্ঠস্বর:
২০২৫ সালের নির্বাচন তাই শুধু আরেকটি নির্বাচনী ফলাফল নয়, বরং কানাডার বহুত্ববাদী দর্শনের বাস্তবায়নের নতুন দৃষ্টান্ত। এইসব মানুষরা পার্লামেন্টে বসবেন, শপথ নেবেন, বিল উত্থাপন করবেন। কিন্তু তাঁরা শুধু আইনপ্রণেতা নন—তাঁরা একেকটি গল্প, একেকটি পারিবারিক ইতিহাসের প্রতিনিধি। তাঁরা সেইসব বাবা-মায়ের সন্তান, যারা প্রথমে এসেছিলেন একটি শিশুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে, কানাডার কঠিন শীতে হেঁটে গেছেন মেট্রো স্টেশনে, অনভ্যস্ত শহরে পথ হারিয়ে ক্লান্ত হয়েছেন।

আজ সেই গল্পগুলো নতুনভাবে বলা হচ্ছে। আজকের সংসদে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা প্রথম প্রজন্মের কষ্টে জন্ম নেওয়া আত্মবিশ্বাসের উত্তরসূরি। তাঁদের জন্য অভিনন্দন—এখনও যারা স্বপ্ন দেখে, যারা কানাডাকে ভালোবেসে নতুন কিছু গড়তে চায়, তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য।

আমরা আশাবাদী—এই নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি উৎসাহ দেবে। তারা রাজনীতি, সমাজসেবা, নীতি-নির্ধারণের অঙ্গনে এগিয়ে আসবে—এবং একদিন হয়তো প্রধানমন্ত্রী হবেন কোনো বাংলাদেশি, কোনো তামিল মেয়ে, কিংবা পাঞ্জাবি ছেলেটি যে স্কুলে প্রথম ইংরেজি শিখেছিল ‘apple’ শব্দ দিয়ে। এই জয় তাদেরও। এই কানাডা আমাদেরও।

Economist/1April/ZI/Canada


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ