টিকটকের ফাঁদে ফেলে দুই তরুণীকে ভারতে পাচার।
ময়মনসিংহ, গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের দুই বোনকে টিকটক ও চাকরির লোভ দেখিয়ে তিনলাখ টাকা নিয়ে ভারতে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। চোরাই পথে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে ভারতে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে নারী পাচারকারী দলের দুই পুরুষ সদস্য সুজন ও ইউসুফ।
জানা গেছে, নারী পাচারকারী দলের দুই পুরুষ সদস্য সুজন (৪৫) ও মো. ইউসুফ (২২) এই দুইবোনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। সুজন নিজেকে নেত্রকোণার বারহাট্রা উপজেলার এবং ইউসুফ নিজেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লোক হিসেবে পরিচয় দেয়। তাঁরা গাজীপুর জৈনা বাজার এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করে। এরপর বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস অর্জন। এক সময় নারী পাচারকারী পুরুষ সদস্য ইউসুফ বড় বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাদের পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বড় বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের দুইমাস পর গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দুই বোন ভারতে পাচারের শিকার হন।
সুজন ও ইউসুফ দুই বোনকে টিকটক করাসহ মাসে ৪০/৫০ হাজার আয়ের চাকরির লোভ দেখিয়ে চোরাপথে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। এরপর তাদের তিন লাখ টাকায় ভারতের রানাঘাট এলাকায় নিয়ে যায় এবং নারী ব্যবসায়ী বাবলু-রাহুলের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এলাকার বিভিন্ন বাসায় ও হোটেলে রেখে দেহব্যবসা করাতো। দুই বোনকে আলাদা আলাদা জায়গায় রেখেছিল ।
পশ্চিবঙ্গের করোনার প্রার্দুভাবে ১৬ মে থেকে লকডাউন শুরু হলে তাদের উপর নারী পাচারকারীদের নজরদারি শিথিল হয়। সেই সুযোগে পালিয়ে যায় দুই বোন। গত ১৭ মে ছোট বোন হাওড়া স্টেশন এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলকাতার শিয়ালদহ এলাকায় ভারতীয় সরকার পরিচালিত সেফ হোম পার্টিসিপেটরি সিসার্চ এ্যান্ড একশন নেটওয়ার্কের হাতে ন্যস্ত করে। বর্তমানে বাংলাদেশ দুতাবাসের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বড় বোন গত ২১ মে ভারতের বোঝাপড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে আটক হয়। বিএসএফ তাকে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সংবাদটি ভারতের বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
বিএসএফর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সুরজিৎ সিং গুলেরিয়া বলেছেন, এ জাতীয় অপরাধ রুখতে শক্ত হওয়া উচিত
পাচার হওয়া দুই তরুণীর বাবা জানান, মাঝে মধ্যেই ভারতীয় নাম্বার থেকে আমাদের কাছে কল করে ওই দলের লোকজন দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিলে মেয়েদের আবার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে; টাকা না দিলে তাঁদের মেয়েদের দিয়ে টিকটিক-অশ্লীল ভিডিও করে তাঁদের দুবাই বিক্রি করে দেবে বলে হুমকি দেয়। গত ২৮ মার্চ শুক্রবার শ্রীপুর থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করতে যান ওই দুই বোনের বাবা। ৬ দিন অতিবাহিত হলেও শ্রীপুর থানা পুলিশ কোন অভিযোগ বা মামলা নেয়নি।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/৪জুন/জই