• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি মাহবুব,সহ সভাপতি কামাল, সম্পাদক মমতাজ ধনবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় দেখতে হাজির হাজারো মানুষ ধনবাড়ীতে নানা আয়োজনেরমধ্য দিয়ে কৃষক দলের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ভোলায় র‍্যাবের অভিযানে ১২ মামলার আসামি আটক ১ যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্টের চোখে এবছর বিশ্বে ‘বর্ষসেরা দেশ’ বাংলাদেশ হাসিনা ও জয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান উঠানামায় বিঘ্ন দীর্ঘ এক দশক পরে জনপ্রিয় “আমার দেশ” প্রকাশিত জার্মানিতে ক্রিসমাস মার্কেটের ভিড়ের মধ্যে গাড়ির ধাক্কায় নিহত ২ আহত অর্ধশতাধিক ধনবাড়ীতে মাশরুম চাষে আত্মকর্মসংস্থানের হাতছানি

মুক্তিযুদ্ধের রমা চৌধুরী একজনই

বিডিনিউজ ইউরোপ ডেক্স
আপডেট : বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের রমা চৌধুরী একজনই
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের এমন একটি ঘটনা, যার সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের মানুষের শত আশা-আকাঙ্ক্ষা, মুক্তির গল্প।তেমনি মিশে আছে অনেক আত্মগ্লানি এবং হতাশার গল্পও। নারী-পুরুষ সর্বস্তরের মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল দেশের জন্য। ক’জনের গল্পই বা আমরা জানি!

একাত্তরে সব হারানো একজন নারী যিনি আমাদের আদর্শ। তার সংগ্রামী জীবন আমাদের অনুপ্রেরণার প্রতীক।
যিনি পথকেই তার ঠিকানা করে নিয়েছিলেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় রেখে গেছেন তার পদচারণা তিনি হলেন একাত্তরের জননী ও বিশিষ্ট লেখিকা রমা চৌধুরী।
তাঁর ত্যাগের পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প।

পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল।দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিনিই প্রথম নারী, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই শিশু সন্তান নিয়ে পোপাদিয়ার গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন রমা চৌধুরী।সে সময় তার স্বামী ছিলেন ভারতে।স্বামী সংসার, সন্তান নিয়ে সাধারণ নারীদের মতো তিনিও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন।কিন্তু বিধি বাম। মুক্তিযুদ্ধ রমা চৌধুরীর জীবনে মূর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের ১৩ মে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালায়।পাশবিক নির্যাতন চালায় তার ওপর। সম্ভ্রম হারানোর পর পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে পালিয়ে পুকুরে নেমে আত্মরক্ষা করেছিলেন তিনি।তখন হানাদাররা গানপাউডার লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় তার ঘরবাড়িসহ যাবতীয় সহায়-সম্পদ। ঘরবাড়িহীন বাকি আটটি মাস তাকে দুইটি শিশুসন্তান আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে জলে-জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়াতে হয়েছে। রাতের বেলায় পোড়া ভিটায় এসে কোনমতে পলিথিন বা খড়কুটো নিয়ে মাথায় আচ্ছাদন দিয়ে কাটিয়েছেন।এমনকি লোকলজ্জার ভয়ে দোকানে গিয়ে কিছু খাবারও সংগ্রহ করতে পারতেন না।

স্বাধীনতার পর তার জীবনের কালো অধ্যায় শেষ হতে পারতো কিন্তু দুঃখ যেন তার পিছু ছাড়লো না।
রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একসময় তার ছেলে সাগর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর মারা যায়। সাগরের মৃত্যুর ১ মাস ২৮ দিনের মাথায় ৩ বছরের ‍টগরও মারা যায়।ছেলেদের হিন্দু সংস্কারে না পুড়িয়ে তিনি মাটি চাপা দেন।দুই সন্তানের দেহ মাটিতে আছে বলে রমা চৌধুরী জুতা পড়া বন্ধ করে দেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেঁচে থাকার সংগ্রামে রমা চৌধুরী বেছে নেন লেখালেখি পেশাকে।প্রথমে তিনি একটি পাক্ষিক পত্রিকায় লিখতেন। সম্মানীর বিনিময়ে তাঁকে পত্রিকার ৫০টি কপি দেয়া হত।তিনি লিখেছেন ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিনযাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’সহ ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করে চলতো তাঁর সংসার।
প্রবল দুঃখ দুর্দশার মধ্যে থেকেও কখনো কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি এই সংগ্রামী নারী।দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে অনাথ আশ্রম খোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।জীবনের অনেক বড় সময় তিনি একাই যুদ্ধ করে এগিয়েছেন। ইচ্ছা ছিল শত বছর বেঁচে থাকার কিন্তু
২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে ৭৭ বছর বয়সে রমা চৌধুরী আমাদের ছেড়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

এরকম কতো রমা চৌধুরী আছে আমরা ক’জনের নামই বা জানি যাদের ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি বিজয়, পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

-জাতীয় পতাকা আমাদের কাছে পরম শ্রদ্ধার কিন্তু যাদের জন্য এই লাল সবুজ পতাকা পেয়েছি তাদের কি যথাযথভাবে সম্মান দিতে পেরেছি আমরা?
-যারা আমাদের নতুন করে পথ চলা শেখালো তাদের অপমান, গ্লানি কি আমরা মুছে দিতে পেরেছি?

জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে যারা দেশকে রক্ষা করতে যাপিয়ে পড়েছিল তারা স্বপ্ন দেখেছিল সুন্দর একটা দেশের যেখানে মানুষের লোভ-লালসা, ভেদাভেদ থাকবে না, থাকবে অর্থনৈতিক মুক্তি।
দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের অনেক স্বপ্ন এখনও আলোর দেখা পায় নাই। তাই তো রমা চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “মানুষের লোভ-লালসা দেখে আমি আর ভক্তি রাখতে পারছি না। সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও পুরোপুরি আসেনি। লোভী মানুষের ভিড়ে নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। তাই বিড়াল নিয়ে থাকি। ওদের সৌন্দর্য দেখি। লোভী মানুষের চেয়ে বিড়াল অনেক ভালো।”

বিভিন্ন দিবসে শুধুমাত্র লাল সবুজ জামা গায়ে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমরা যেন স্বাধীনতার মর্মবাণী ভুলে না যাই। তাদের লক্ষ্য, তাদের স্বপ্নকে যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি এবং সবার মাঝে যদি দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে পারি
তবেই মুক্তিযুদ্ধের সার্থকতা প্রতিফলিত হবে।

লেখিকাঃ
নিশাত শারমিন জুঁই
বিএসসি ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার,খুলনা
সংগ্রহে “শব্দ ধারা” রেফারেন্স বৈমানিক এমডি মাহফুজুল আলম, ফ্লোরিডা,আমেরিকা

বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৮ ডিসেম্বর/ জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ