ধনবাড়ীতে বরই চাষ করে স্বাবলম্বী দুই বন্ধু। টাংগাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় উচ্চ ভিটামিন সমৃদ্ধ বল সুন্দরী কুল বরই চাষ করে লাভবান হয়েছেন দুই বন্ধু। সু-স্বাদু আর পুষ্টিমান হওয়ায় ক্রেতারা এ বল সুন্দরী কিনছেন। অন্য কুল বরইয়ের চেয়ে এ কুলের চাহিদা থাকায় কৃষকরাও আগ্রহী।ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলার কয়েক জন কৃষক বাণিজিকভাবে শুরু করেছে এ বল সুন্দরী বরই চাষ। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় তিন একর জমিতে এ কুলের চাষ হয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে কুল বরই দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় করছেন এবং আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ওইসব কুল চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে বল সুন্দরী কুল বরই ভালো ফলন হয়েছে।
ধনবাড়ী পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডে বাসিন্দা দুই বন্ধুরা হলেন চালাষ পশ্চিম পাড়া গ্রামের আশরাফ আলী ও কলেজ পাড়া চরভাত কোড়া গ্রামের আলিম হোসে কথা হইছে তাদের সঙ্গে। তাঁরা দু’জনে মিলে এবার ৬০ শতক জমিতে বল সুন্দরী কুল বরই চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছ ৫ থেকে ৬ হাত উঁচু। বাগান পরিচর্যায় কাজ করছে ৪/৫ জন শ্রমিক। গাছে ফলন হয়েছে ভালো। থোকায়-থোকায় ঝুুলছে পাকা বল সুন্দরী। ফলের আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো। খেতেও সু-স্বাদু। ইতিমধ্যে কুলগুলো বাগান থেকেই পাইকারী ৮০/৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘৬০ শতক জমিতে বল কুল সুন্দরী বরই চাষাবাদে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। চারা রোপণের প্রথম বছরেই ফল আসে। একটি গাছ থেকে ৫/৬ বছর ফল পাওয়া যায়। অন্য ফলের তুলনায় খরচ কম, লাভ বেশি। সকল খরচ বাদে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ পাওয়া যাবে আশা করছি। এলাকার কৃষকরা এখন বল কুল সুন্দরী বরই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। অপর দিকে দুই বন্ধুর সফলতা দেখে ধোপাখালি ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে সোহেল মিয়া ৫ বিঘা জমিতে বল সুন্দরী বরই চাষ করেন তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বল কুল সুন্দরী জাতের কুল বরই বাগান করেছি। এবার ফল এসেছে কয়েকগুণ। ২/৩ দিন পরপর গাছ থেকে ফল তোলা যায়। দেখি আল্লাহ কি করে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান বলেন, অস্ট্রেলিয়ান ও ভারতীয় জাতের বল সুন্দরী কুল বরই দেখতে সুন্দর। খেতেও সু-স্বাদু। এ কুল বরই চাষে খরচ কম। অন্য ফল চাষের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ অঞ্চলে বাণিজিকভাবে কোনো কুল বরই চাষ হয় না। যেসব কৃষকরা ফল চাষের সাথে জড়িত তাদেরকে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করি আগামী বছর থেকে বল সন্দুরী কুল বরই চাষ বৃদ্ধি পাবে। চালাষের দুই বন্ধুর সাফল্য দেখে আমি খুশি হয়েছি, ওদের জন্য কৃষি অফিস থেকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে সেটা ভবিষ্যতের জন্য অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, কৃষি গবেষণার ফলে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের বরই বা কুলের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। দেশি টক জাতীয় বরইয়ের পাশাপাশি রয়েছে নারকেল বরই, আপেল কুল, বাউকুল ও থাইকুল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে।
এ মুখরোচক ফলটি শীতকালে আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলে পাওয়া যায়। শখের বশে অনেকে বাড়ির ছাদেও চাষ করছেন। এটি খেতে সুস্বাদু, পুষ্টিগুণে ভরা। বরইয়ে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামসহ নানা উপাদান; যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
Economist/2January/ZI/donbari