ধনবাড়ীতে প্লাস্টিকের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি পণ্য।গ্রামবাংলার একসময়ের ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি জিনিস। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব হস্তশিল্প। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোগান দেওয়া এই শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক এবং ককসিটের আধুনিকতার ভিড়ে। এভাবে হারিয়ে যেতে থাকা বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন ধনবাড়ী উপজেলার কয়েকশ মানুষ।
দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প, বিশেষ করে বাঁশের তৈরি পণ্য একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, চাটাই, মোড়া, চালনি, হাতপাখা, খাঁচা, মই, চাই, আন্তা, ঢুলা, খালই, কুলা এর মধ্যে অন্য তম। শিল্পটি গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি বড় উৎস ছিল। বিশেষ করে নারীরা ঘরে বসেই এ কাজ কর তে পারত এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে পারত।
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি পূর্ব পাড়া গ্রামের আলেফ মিয়া বলেন, ‘আমরা তো আগে অনেক জিনিসপত্র বানাতাম। এখন আর বানাই না। অল্প করে বানাই, আগের মতো বেচাকেনাও হয় না। এখন সবাই প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে। তাই বাঁশ কিনে জিনিসপত্র বানিয়ে খরচ উঠে না। বাঁশ কিনতেও বেশি টাকা লাগে আর জিনিসপত্রও বিক্রি হয় না।’
বীরতারা ইউনিয়নের কেন্দুয়া গ্রামের জবেদ আলী বলেন, ‘বাশেঁর তৈরি জিনিসপত্র অনেক কষ্ট করে বানাতে হয়। সেই তুলনায় মজুরি পাওয়া যায় না। এরপরও নিজের পরিবার চালাতে এসব বানাতে হয়। মানুষ যদি প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করত, তা হলে এর বেচাকেনা বেশি হতো। আমরাও ভালো পারিশ্রমিক পেতাম।’
এ বিষয়ে ক্রেতা আব্দুল রহমান বলেন, ‘বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আগে সবাই ব্যবহার করত, আমরাও করতাম। এখন সহজে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়, আবার টিকেও বেশি দিন। তাই খুব প্রয়োজন না হলে আমাদেরও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কেনা হয় না।’
বানিয়াজান ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। তবে ৩ থেকে ৫ বছর ধরে ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। প্লাস্টিক আর ককসিট আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।’
ধনবাড়ী বাজারে বাশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, ‘একসময় হাট-বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে গেলে বিক্রি হয়ে যেত। এখন হাট শেষ হয়ে যায়, কিন্তু এগুলো আর আগে র মতো বিক্রি হয় না। তাই বিক্রি না হওয়া জিনিস পত্র নিয়ে ফিরে যেতে হয়।
তবুও আমি বাপ-দাদার পেশা টি এখনো পর্যন্ত ধরে রেখেছি। আজীবন এই পেশা ধরে রাখতে চাই।’
এ ছাড়া বাঁশের তৈরি সব মালামালের বেচা-বিক্রি এত কমে গেছে যে, শিল্পটি ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
Economist/9January/ZI/Donbari