অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্টের নিকট অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসাবে তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে,অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী স্লোভেনিয়ায় বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় রাষ্ট্রদূত মুহিত ভিয়েনা বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন থেকে স্লোভেনিয়ার দায়িত্বও পালন করবেন।
গত ৩০ শে মার্চ স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোরের নিকট রাষ্ট্রদূত মুহিত আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি তার পরিচয়পত্র
হস্তান্তর করেছেন। এই সময় রাষ্ট্রদূত
মুহিতের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন ভিয়েনায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের ডেপুটি চিফ রাহাত বিন জামান ও দূতাবাসের প্রথম সচিব ও দুতালয় প্রধান মোঃ তারাজুল ইসলাম।
পরিচয়পত্র প্রদানের পর এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে
রাষ্ট্রদূত মুহিত প্রেসিডেন্ট পাহোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে স্লোভেনিয়া কাউন্সিল অব দ্যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিতের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি বরুট পাহোরকে অভিনন্দন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আর্থসামাজিক সূচকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত স্লোভেনিয়ার সরকার এবং একই সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারসহ গ্রিন ইকোনোমিক ট্রানজিশন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্লোভেনিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষাধিক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমি মায়ানমারে(বার্মা) দ্রুত ও নিরাপদে প্রত্যাবাসনের জন্য স্লোভেনিয়া সহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সহায়তার আহবান জানান।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত মুহিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ তম সুবর্ণ জয়ন্তীর পাশাপাশি দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন সহ বাংলাদেশের এলডিসির সাফল্যের কথা জানান স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোরকে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্লোভেনিয়ার পূর্ণ সমর্থনের জন্য অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বাংলাদেশের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক রূপান্তরকে আরও সহজতর করার জন্য স্লোভেনিয়ার পূর্ণ সমর্থনের অনুরোধ করেন। তিনি বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা যা ২০৪১ সালের দেশের স্বাধীনতার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগকেও সমর্থনের অনুরোধ করেন।
স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোর
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন এবং অত্যন্ত উদারতার সাথে মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
তিনি দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে সমাধানের ক্ষেত্রে তার দেশের সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন এবং মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার ফেরত পাঠানোর বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থনের আশ্বাসও দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত অদূর ভবিষ্যতে তার সুবিধা
অনুযায়ী বাংলাদেশ সফরের জন্য বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহোর এই আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেছেন এবং আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে,তিনি আগামী ২০২২ সালের কোন এক সময় বাংলাদেশ সফরের আশা করছেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিতকে স্লোভেনিয়া প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
উল্লেখ্য,অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের পূর্বে রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত ডেনমার্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত।ছিলেন। তিনি অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘ দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অস্ট্রিয়া অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
মুহাম্মদ আবদুল মুহিত ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) পররাষ্ট্রবিষয়ক ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (প্রোটোকল) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৭ বছরের দীর্ঘ কূটনীতিক যাত্রায় তিনি কুয়েত, নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই মেয়ে সন্তানের পিতা।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/২এপ্রিল/জই