‘নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত আইনে অনেক মৌলিক বিধানই বদলে ফেলেছে।’ সোমবার দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, তারা যে নতুন আইন প্রস্তাব করেছে ওই আইনের একটি বড় অংশ ধারা ৬৬ থেকে ৮৪ পর্যন্ত কোনোটাই স্থানীয় সরকারের প্রচলিত যেসব আইন আছে তাতে এর একটিরও অস্তিত্ব নেই। তবে এগুলো আছে বিধিমালার মধ্যে। কিন্তু প্রস্তাবে তো নির্বাচন কমিশন আগে বলেনি যে বিধিমালা থেকে এনে নতুন আইন করা হবে। তবে বাস্তবে তারা সেটিই করেছে।
অর্থাৎ তারা যা বলেছে সেখান থেকে সরে গেছে। আলাদা আলাদা আইনগুলোকে একীভূত করে একক আইন প্রণয়ন করা হলে ওই একীভুত আইন থেকে পৃথক পৃথক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান খুঁজে খুঁজে বের করে বুঝা বা আয়ত্তে আনা জটিল, কষ্টকর ও দুরূহ হয়ে পড়বে বিধায় কমিশনের এই উদ্যোগ অসঙ্গত ও পরিত্যাজ্য।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, করোনার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার, যখন সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, স্কুল কলেজ বন্ধ, আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং করা লাগে ওই সময়ে আপনি আমার দেশে সব মানুষ জড়িত কেউ ইউনিয়ন পরিষদে, পৌর সভায়, জেলায়, উপজেলায়, আবার কেউ সিটি করপোরেশনে। যারা ভোটার ও প্রার্থী তাদের সাথে কোনো পরামর্শ না করে বা তাদের মতামত দেয়ার সময় বা সুযোগ না রেখে ওয়েব সাইটে দিয়ে এই করোনার মধ্যে নতুন একটা আইন করতে হবে- এটা অর্থ হয় না, এটা জরুরি না।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, এটা নিয়ে দাবি নেই, আন্দোলন সংগ্রাম নেই। যেসব নিয়ে দাবি আছে- নির্বাচন সুষ্ঠু করেন, যেখানে কারচুপি হয় তা বন্ধ করেন, দিনের ভোট যেন রাতে না হয়, ভোট কেন্দ্রে যেন সন্ত্রাস না হয়, প্রচারণায় যে বাঁধা হয় সেগুলো বন্ধ করেন সেদিকে নির্বাচন কমিশনের কোনো আগ্রহ নেই। যেটা নিয়ে কথা-বার্তা নেই তা নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রস্তাবিত নতুন আইনের রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারের দীর্ঘ দিনের পদবীগুলো বাংলা করণের প্রস্তাব, ফেরারি আসামিদের নির্বাচন করতে না দেয়া, প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহকে নতুন আইনে অন্তুর্ভুক্ত না করা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক মনোনয়ন দেয়া, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের তালিকা বৈধ প্রার্থীদের দেয়ার ব্যবস্থা না রাখা, ভোট গণনার সময়ে প্রার্থী ও এজেন্টদের না রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে দলের আপত্তি তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি, পৃথক পৃথক আইন থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে একীভূত করে চলমান করোনা সঙ্কটকালে প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রণয়নের এই অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক উদ্যোগ থেকে কমিশন বিরত থাকবে। এটা আমরা আশা করছি।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এতোসব যুক্তিসঙ্গত কারণ অগ্রাহ্য করে যদি কমিশন একচেটিয়াভাবে প্রস্তাবিত নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয় তাহলে বিএনপির দেয়া আইনের অসঙ্গতিগুলো দূরীকরণ ও সংগত দাবিগুলো পূরণ এবং আমাদের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো সংশ্লিষ্ট আইনে সন্নিবেশিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এককভাবে কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে তা দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি মতামত ও সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করে যা গত ৩১ অক্টোবরের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন পায়।
পরে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল শনিবার এসব সুপারিশসহ দলের মহাসচিবের একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেন।